স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বাংলাদেশে আমরা প্রতিদিন কোন না কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছি। আপনাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। মিথ্যা কথা, গুজব বা ভুল তথ্যে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কমিউনিটি পুলিশ এর সদস্যগণ কাজ করবেন।
আজ (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগে কমিউনিটি পুলিশিং ডে- ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
যেকোন তথ্য জানলে তা যাচাই করে দেখার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। আমরা খারাপ দিক দেখেছি রামু, নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি ভোলায়। এসমস্ত গুজব প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশকে কাজ করতে হবে। কমিউনিটি পুলিশ বিশ্বব্যাপী বিস্তিৃত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা আমরা সাজিয়েছি। পুলিশের সকলে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করছে। এজন্য দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমরা এখন বীরদর্পে বলতে পারি আমরা পেরেছি। এই রাজারবাগ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের বীর সদস্যরা। আমি সব জায়গায় এখন বলি একযুগ আগে যে পুলিশ আপনারা দেখেছেন বর্তমান পুলিশ এক নয়। দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
পুলিশকে কমিউনিটি বা জনগণের সাথে মিশে গিয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একটি টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা। কমিউনিটি পুলিশিংয়ে জনসাধারণ দায়িত্ব পালন করছেন বলে শান্তির বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হচ্ছে। ঢাকা শহরের জনগণের তথ্য সংগ্রহ করে একত্রে রাখাটা অনেক কঠিন। এই কঠিন কাজটা অনেক দক্ষতার সাথে যে যার অবস্থান থেকে করেছেন। এজন্য তাদের মূল্যায়ন করাটা জরুরী। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমনে বিট পুলিশিং গুরুত্বপূর্ণ। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে বিট অফিসার পাড়া মহল্লায় জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে সরকার কি চায়, পুলিশ কি চায়। আমাদের দেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেভাবে কাজ করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা যাতে জোড় গলায় বলতে পারি বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস মুক্ত করতে পেরেছি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। আপনাদের সহযোগিতায় মাদককে নিয়ন্ত্রণে আনবো ইনশাআল্লাহ।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (এ এন্ড ও) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী বিপিএম (বার) বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং একটি গ্লোবাল কনসেপ্ট। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম রয়েছে। তাবে বাংলাদেশের কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমটা একটু ভিন্ন। জনগণ ও পুলিশের একাত্মতায় সোনার বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করবে। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ২ লক্ষ ১২ হাজার সদস্য কর্মরত রয়েছে। জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটি দেশের ৪০০ জন জনগণের সেবাই একজন পুলিশ। সেখানে আমাদের দেশে প্রতি ৮০০ জনের সেবায় একজন পুলিশ কাজ করছে। এজন্য পুলিশি সেবায় জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন উপলক্ষে আগতদের উদ্দেশ্যে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষকে যদি আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে খেলাধুলায় অন্তর্ভূক্ত না করতে পারি, আমাদের সন্তানদের মাঠে নিতে না পারি, তাদের সুকুমার বৃত্তিগুলো গড়ে উঠার সুযোগ করে না দিই, তাহলে আমাদের সন্তানদের সঠিক পথে রাখতে পারবো না। আপনি যদি নিজের নিরাপত্তা ও সন্তানের নিরাপত্তা চান এবং একটি বাসযোগ্য সমাজ তৈরি করতে চান, তাহলে আপনি এককভাবে কখনও করতে পারবেন না। পুলিশও এককভাবে কখনও করতে পারবে না। নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্য ও সন্তান যাতে একটি সুন্দর সমাজ ও পরিবেশে বসবাস করতে পারে সেটির জন্য পুলিশের সাথে মিলে কাজ করুন। সমাজের যে বিষয়গুলো আমরা ঘৃণা করি, সমাজের সবাই মিলে আসুন তাদের বিরুদ্ধে সচেষ্ট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমার সন্তান আপনার সন্তান কেউই মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ সমাজের নানাবিধ অপরাধজনক কাজের প্রভাব থেকে এককভাবে মুক্ত থাকতে পারবে না। যদি না আমরা সবাই মিলে এমন একটি সমাজ তৈরি করি যেখানে তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। আমরা যদি মনে করি এটি শুধু মাত্র পুলিশের কাজ তাহলে এটা কখনও সম্ভব হবে না।
যাঁরা আমাদের সাথে কাজ করতে চান তারা এক পা এগিয়ে আসুন আমরা সবাই মিলে আপনার দিকে দশ কদম এগিয়ে যাবো বলে জানিয়ে কমিশনার আরো বলেন, আমি বাদশা আপনি আমার প্রজা এই মনোভাব নিয়ে ডিএমপিতে কেউ চাকরি করতে পারবে না। এই মহানগরের প্রতিটি মানুষের যে সম্মান, শ্রদ্ধা ও সুন্দর আচরণ পাওয়ার কথা সেই আচরণটি যদি কোন পর্যায় থেকে না পান তাহলে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা অনুরোধ করবো আমাদের সমস্ত ভালো কাজের সাথে থাকেন, ভালো উদ্যোগকে সমর্থন করেন এবং পুলিশের কোন বিচ্যুতি চোখে পড়লে আমাদের জানাবেন আমরা সংশোধনের চেষ্টা করবো এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। এই শহর ও দেশটা আমাদের। আমরা দায়িত্ববোধ ও মানুষের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে এসেছি।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় ,গোলাম আশরাফ তালুকদার সভাপতি শাহজাহানপুর থানা কমিউনিটি পুলিশ ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী গোষ্ঠির সভাপতি ড. এনামুল হক। এসময় কমিউনিটি পুলিশিংয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ঢাকা মহানগরীর জনগণের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশ সদস্য, পুলিশ সদস্যদের মধ্য হতে শ্রেষ্ঠ সিপিও এবং বিট পুলিশিং অফিসারদের পুরস্কৃত করেন প্রধান অতিথিসহ বিশেষ অতিথিবৃন্দ।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সঙ্গে কাজ করি, মাদক-জঙ্গি-সন্ত্রাস মুক্ত দেশে গড়ি এই শ্লোগানে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে রাজারাবাগ এসে শেষ হয়। র্যালীতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। এসময় র্যালীতে ডিএমপি কমিশনারসহ ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিনিধিসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পুলিশের সঙ্গে কাজ করি, মাদক-জঙ্গি-সন্ত্রাস মুক্ত দেশে গড়ি এই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় দিয়ে বাংলাদেশ জুড়ে উদযাপিত হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০১৯।
Leave a Reply