চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন চাঁন্দগাও এলাকায় চাঞ্চল্যকর মা-ছেলে হত্যাকাণ্ডের ৩৭ দিন পর অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে প্রধান খুনী মো. ফারুক (৩৩)।
আজ বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪টায় নিহতের কথিত ধর্মের ভাই ফারুকের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আকবরশাহ থানার পাক্কারমাথা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। ফারুক চাঁন্দগাও থানার খাজারোড কসাইপাড়ার মো. সিরাজের ছেলে।
র্যাব জানায় হত্যাকান্ডের পর গ্রেফতার এড়াতে ফারুক প্রথমে খাগড়াছড়ি চলে যায়। সেখানে একটি গ্যারেজে কিছুদিন কম বেতনে চাকরি করে। এরপর সেখান থেকে ঢাকায় ছিলেন কিছুদিন। সেখানেও আয় রোজগার ভাল না দেখে আবারো চট্টগ্রামে চলে আসে।
সবশেষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় একটি মাজারে অবস্থান নিয়েছে তথ্য পেয়ে র্যাব পুলিশের যৌথ টিম চট্টগ্রাম শহরের আশেপাশে মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। বিষয়টি টের পেয়ে কৌশলে সে আবারো ঢাকায় চলে যায়।
তবে ৩৭ দিনের নানা পন্থা অবলম্বন করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত র্যাবের হাতে ধরা পড়তে হলো কুখ্যাত এই খুনী। বৃৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় র্যাব চান্দগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-৭ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল।
তিনি বলেন, ফারুক ক্রাইম পেট্রোল সিরিয়াল দেখে হত্যার কৌশল রপ্ত করেছে এবং হত্যার পর আত্মগোপনে থেকে গ্রেফতার এড়াতেও সিরিয়ালের বিভিন্ন কৌশলগুলো কাজে লাগিয়েছে। তিনি বলেন, বিগত ৩৭ দিনের মধ্যে বারবার সিম মোবাইল ও লোকেশান পরিবর্তণ করেছে খুনী।
মশিউর রহমান জুয়েল আরো বলেন, খুনি ফারুক প্রায় সময় ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের সিনেমার কাহিনীর স্টাইলে খুন করার হুমকি দিত। বাস্তবেও সে তাই করেছে। ফিল্মি স্টাইলে প্রথমে ধর্মের বোন গুলনাহার বেগমকে খুন করে। এ ঘটনা দেখে ফেলায় পরে ৯ বছরের ছেলে রিফাতকেও রান্না ঘরে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে ফারুক।
র্যাব-৭ এর চাঁন্দগাও ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী তারেক আজিজ বলেন, ফারুক ভুক্তভোগী গুলনাহার বেগমের সাথে যৌথভাবে সিঙ্গারা, সমুচা, পিঠা বিরিয়ানীসহ নাস্তার ব্যবসা করতেন।
হত্যার কিছুদিন আগে থেকে দুজনের মধ্যে প্রায় সময় কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এর জেরে রাগের মাথায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় ফারুক। মা ও ভাইয়ের খুনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে শুনে সংবাদ সম্মেলনে ছুটে আসেন নিহত গুলনাহার বেগমের মেয়ে ও নিহত রিফাতের বড় বোন ময়ূরী আকতার।
উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার মা অসুস্থ ছিলেন। টুকটাক পিঠা বানিয়ে বিক্রি করতেন। অনেকটা টানাপোড়নে আমাদের সংসার চলতো। একমাত্র ছোট ভাইটা ছিলো আমাদের পরিবারে সকলের মধ্যমণি। মা ও ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে পরিবারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় নিজে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে গার্মেন্টসে যোগ দিয়েছিলাম। সে ভাই আর মাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমি ফারুকের ফাঁসি চাই।
উল্লেখ্য গত ২৪ আগস্ট চাঁন্দগাও থানার পাঠানিয় গোদা এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংভাবে হত্যা করা হয় গুলনাহার বেগম ও তার ৯ বছরে শিশু পুত্র রিফাতকে। যার নেপথ্যে ছিলেন পাতানো ভাই মো. ফারুক।
২৪ ঘণ্টা/রাজীব
Leave a Reply