অস্থির রোহিঙ্গা ক্যাম্প ; তিন দিনে ৬ খুন, অগ্নিসংযোগ

ইসলাম মাহমুদ, কক্সবাজার প্রতিনিধি: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও পুরনো চরিত্র রয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের। নিজ দেশ মিয়ানমারে দাঙ্গায় লিপ্ত থাকার অভ্যাসটা এখনো বদলায়নি। প্রতিদিন খুন খারাবিতে মেতে ওঠছে স্বদেশ তাড়িত এই জাতি। তুচ্ছ ঘটনায় লেগে যায় সংঘর্ষে। তাদের সেই অগ্নিচরিত্র-বিষবাস্প ছাড়াচ্ছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। দেখাদেখি অনেকেই অপরাধে জড়াচ্ছে।
সম্প্রতি উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৩ দিনে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় দুই বাংলাদেশীসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলমান সংঘর্ষে পুরো ক্যাম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত দু’দিন ধরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষে অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুতুপালং টু-ইস্ট ক্যাম্পের সি-ব্লকে আমিন মাঝির পাহাড়ে অগ্নিসংযোগ করেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। রোহিঙ্গাদের দু’পক্ষের চলমান সংঘর্ষ থামাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজ মো. আনোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কর্তব্যরত সকল ইউনিটকে যৌথভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
ডিআইজি বলেছেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আধিপত্য বিস্তারের কোন সুযোগ নাই। এখানে আধিপত্য থাকবে একমাত্র আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কোন অপরাধিকে ছাড় দেওয়া হবে না। অবৈধ অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।
এদিকে, গত সপ্তাহজুড়েই কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১নং ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’রোহিঙ্গা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও সংঘাত চলে আসছে। এসময় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত এক মহিলাসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে এক সাথে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় উক্ত ক্যাম্পে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। এ কারণে বুধবার সকাল থেকে সারাদিন দু’পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বুধবার সকালে এপিবিএন এর এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সকাল ১০টার পর থেকে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এঘটনায় ভয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে আশ্রয় নেয়। এসময় রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায়।
রোহিঙ্গারা বলছে, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইয়াবা ব্যবসা, দোকান থেকে চাঁদাবাজি ও এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মুন্না গ্রুপ ও আনাছ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যকার গোলাগুলির ঘটনায় ক্যাম্প সংলগ্ন বাংলাদেশী গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ক্যাম্পে সকাল থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য, পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনী টহল জোরদার করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৪ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশ। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত স্বগোত্রী যুবককে উদ্ধার করেছে এপিবিএন। এদিকে, গত মঙ্গলবার সংঘর্ষে নিহত চারজনের দুইজন বাংলাদেশী রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানামারের রাখাইনে সেদেশের সেনাবাহিনীর অব্যাহত বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা। আশ্রয় নেয়ার এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ক্রমাগতভাবে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কয়েকদিনের ধারাবাহিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব ঘটনায় বহিঃশক্তির কোন ইন্ধন আছে কিনা? স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখার দাবি ওঠেছে।
২৪ঘণ্টা/এন এম রানা

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *