ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে চিনিকল ছাড়া তেমন কোন ভারী কোনো শিল্প-কারখানা না থাকায় কৃষিকাজই এ অঞ্চলের মানুষের ভরসা। চলতি বছরে করোনা ভাইরাস ও টানা বৃষ্টির কারনে এবার কৃষির ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ে, এতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। এবারও সে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি জেলার আলুচাষিরা। চলতি বছর একটির পর একটি দুর্যোগে বিপর্যস্ত তারা। কখনও অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও তীব্র শীত ছাড়াও রয়েছে পোকার আক্রমণ। আবার কখনও দাম কম। তবুও থেমে নেই জেলার সাধারণ মানুষের জীবন। এরই মধ্যে জমিতে স্বপ্ন বুনে চলেছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে এবার বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে আলু চাষ। দেরিতে চাষ হওয়ায় বাজারে এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না নতুন আলু। পুরোনো আলুর মজুতও শেষ। ফলে আলুর দাম বেড়েই চলেছে।
জানা গেছে, গত বছরের এ সময়ে যে আলু ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই আলু বর্তমানে খেতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। আবার সারা দেশে করোনা মহামারির কারণেও বাড়ছে দাম।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এই অসম বৃষ্টিতে ফের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলুচাষিরা। পাঁচ-ছয় মাস টানা বৃষ্টিতে এই জেলার অনেক আলু জমিতেই পানি জমে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষেতে এই আলু পচে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষক। এর আগে বন্যার কারণে দেরিতে চাষ হওয়ায় বাজারে এখনও নতুন আলুর দেখা নেই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এর পর থেকে আবার বৃষ্টি হলে আলুর গাছ মরে যেতে পারে। পুরোনো আলুর মজুতও শেষ। ফলে আলুর দাম বেড়েই চলেছে। এরপর এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফলন ভালো না হলে পেঁয়াজের মতো আলুর দামও আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে।’
কৃষকরা জানিয়েছেন, জমি শুকোনোর আগেই ফের বৃষ্টি আলু চাষের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। জমিতে পানি জমে থাকলে আলু পচে যেতে পারে। ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে শীতকালীন সবজিতেও। সব মিলিয়ে বৃষ্টির কারণে মাথায় হাত কৃষকদের।
তাদের বক্তব্য, আলু একটি স্বল্পমেয়াদি লাভজনক সবজি। রোপণের দুই মাসেই আলু উত্তোলন করা যায়। এতে একরপ্রতি ফলন হয় পাঁচ-ছয় মেট্রিক টন। তবে এবার পানির কারণে প্রথমে আলু চাষ শুরু করা যায়নি। এখন আলু ওঠার মুখে এই বৃষ্টি ফের ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। চড়া দামে বীজ কিনে ধার-দেনা করে চাষ করে এখন লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, এই বৃষ্টি আরও চললে আলুর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। পাশাপাশি খামখেয়ালি আবহাওয়ার জেরে এখন শীতকালীন সবজিরও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, টানা ঝড়-বৃষ্টির কারণে এবার জেলায় আলুসহ সবজি হয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হবে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন শাক-সবজি।
২৪ ঘণ্টা/রিহাম/গৌতম
Leave a Reply