আলুর দামে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না! সবজি, মাছ ও মুরগির বাজার চড়া

চট্টগ্রামে সবজি বাজার চড়া

রাজীব সেন প্রিন্স : হঠাৎ করে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়া আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তা, আড়ত ও কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে সর্বোচ্চ যে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না কোনো পর্যায়েই। কেজি এখনও ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা এখনো আলুর বিক্রি করছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। সরকারের নির্দেশে অনুযায়ী, খুচরায় প্রতিকেজি আলুর দাম হবে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও সরকারের এ নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যাচ্ছে না।

কম দামে আলু পাওয়ার আশায় সকালে অনেক ক্রেতাই বাজারে ছুটে যান। তবে বাজারে গিয়ে তাদের হতাশ হতে হয়েছে। কারণ আগের মতোই আলুর জন্য চড়া দাম গুনতে হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। গত সপ্তাহের তুলনায় গুটি কয়েক সবজি ৫০ টাকার নিচে নামলেও অধিকাংশ সবজি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। পাশাপাশি মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

গতকাল শুক্রবার সরকারি বন্ধের দিনে চট্টগ্রাম নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও চাক্তাই বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির বাজারে এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে। দু-একটি সবজি কেজিতে ৫-১০ টাকা করে কমলেও অধিকাংশ সবজিতেই হাত দেওয়ার জোঁ নেই নি¤œ ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের।

চাক্তাই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখনো ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। গাজর ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

আর শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতোই ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া কাঁকরোল, করলা, ঢেঁড়স, পটল, ছোট কচু ও ঝিঙ্গা ৬০ টাকা কেজিতে এবং মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও পেঁপে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কচুর লতি ৪০ টাকা ও প্রতি শাক আটি প্রতি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। স্বস্তি মিলছে না পেঁয়াজের দামেও। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যও গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা।

নগরীর পাথরঘাটা থেকে চাক্তাই সবজির বাজারে আসা চাকরীজীবি শুভ্রা দাশ হতাশার সুরে বলেন, এখন একশ টাকার সবজি কিনলে এক বেলাও ঠিক মতো হয় না। এক সপ্তাহে শুধু সবজির পেছনেই দেড়-দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অবস্থা এমন চলতে থাকলে আমাদের পক্ষে টেকাই মুশকিল হবে।

সবজির দামের বিষয়ে বিক্রেতা আব্দুল গফর বলেন, বন্যার পর টানা বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে সবজির দাম কিছুটা চড়া। তাছাড়া আড়ৎ থেকে সবজি আনার পর অনেক সবজি নষ্ট হয়, ফেলে দিতে হয়। ফলে গড় দামে বৃদ্ধি পড়ছে।

নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০ টাকা এবং এবং প্রায় প্রতিটি মাছে কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৪০ টাকা এবং ২০০ টাকা কেজি দরে সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে শুক্রবারের বাজারে। এক হালি মুরগির ডিম কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৪০ টাকা।

বাজারে লইট্টা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, দেশি রুই প্রতিকেজি ১৯০ থেকে ২৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, পোপা ২৪০ টাকা, কাতাল ২৬০ থেকে ২৯০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকার ভেদে ৩৮০ থেকে ৬৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং ৫শ টাকা কেজিতে পাবদা মাছ বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *