লক্ষ্মীপুরে পৃথক ঘটনায় দুই স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

অ আ আবীর আকাশ,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে রহিমা আক্তার লামিয়া (১০) নামে এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আব্দুর রহিমের বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

অপর দিকে রায়পুর উপজেলার ২ নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের উত্তর চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শেণীর স্কুল ছাত্রী ডালিয়া আক্তারের মাথায় পতাকার স্টান্ড ভেঙে পড়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে বিবাদী করে মামলা করেছেন।

এদিকে লামিয়ার মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত লামিয়া একই এলাকার আবদুর রহিমের মেয়ে ও পশ্চিম চরকাদিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

পুলিশ জানায়, লামিয়া বিকেলে দোলনায় খেলছিলেন। ওই সময় দোলনার রশি গলায় ফাঁস লেগে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ বলছেন লামিয়া বাবা-মার সাথে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আবছার জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

অপরদিকে রায়পুরে ৪র্থ শেণীর স্কুল ছাত্রী ডালিয়া নিহতের ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা ও সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবারে নিহত স্কুলছাত্রীর বাবা উত্তর চরবংশী ইউপির সাবেক সদস্য টিটু কবিরাজ বাদি হয়ে এই মামলা করেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর জাতীয় পতাকার ঝরাজীর্ণ ষ্ট্যান্ড ভেঙ্গে ৪র্থ শ্রেণীর মেধাবি ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস ডালিয়া গুরুত্বর জখম হয়। তাকে উদ্ধার করে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল হয়ে ঢাকায় একটি হাসপাতালে উঠার সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে সে মারা যায়।

মামলার এজাহারে জানা যায়, ৩০৪ এর ৩৪ প্যানাল কোড ১৮৬০ অবহেলা জনিত মৃত্যু ও সহায়তার অভিযোগে উত্তর চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু তাহের মাষ্টার-সহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, শিশুটি নিহতের ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কারণ দর্শানো একটি নোটিশ দিয়েই কোন দায়িত্ব শেষ করেছেন। এছাড়াও স্কুল চলাকালিন সময়ে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কোচিং বাণিজ্য, গাইড বই বাণিজ্য, আল্পনা আক্তার নামে এক শিক্ষিকার বদলি, শিক্ষক না হয়েও মহিলাকে শিক্ষকের স্বামীকে দিয়ে পাঠদান করাসহ বেতন আত্মসাৎ ও স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পরোক্ষভাবে দায়ী প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার। জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তারা পরিদর্শন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।

নিহত ছাত্রীর পিতা টিটু কবিরাজ আরো জানান, প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তারের অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। তাদের নির্দেশই জেসমিন আক্তার প্রধানমন্ত্রীর ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতি করে চলেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্কুলের স্লিপ ফান্ডের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। সংস্কারের বাৎসরিক অনুদান পেলেও তার কোনটিই খরচ করেননি বলে তিনি জানান।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার পলাতক থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলে কল করলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কেএম মোস্তাক আহম্মেদ জানান, করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকলেও স্কাউটের তালিকা করতে ওই গ্রুপের নিহত শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে স্কুলে ডেকে আনেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *