রেল-বন্দরের অধিগ্রহনে চলে গেছে নগরের অনেকের জায়গা জমি: চসিক প্রশাসক

সমাজ বিকাশের ধারায় পুঁজিবাদী আগ্রাসন ও নগরায়নের প্রভাবে দেশের অনেক লোক এখন গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অথচ বাবুই পাখিও নিপুন কারুকাজে তাঁর বাসা বানিয়ে নেয়। সভ্যতার এত উন্নতি তারপরও মানুষকে তাঁর মৌলিক অধিকার বাসস্থানের জন্য ভবঘুরের মত ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর বিরাট একটা জনগোষ্ঠীও আজ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

নগরীর অনেক জমি অধিগ্রহন করেছে রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমান সরকার মানুষের অন্য চার মৌলিক অধিকারের মত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাসস্থান নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন আজ বৃহস্পতিবার সকালে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব বসতি দিবস ২০২০ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এবারের বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “সবার জন্য আবাসন : ভবিষ্যতের উন্নত নগর”।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে অন্যান্যেদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, স্থপতি আবদুল্লাহ ওমর, বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী জয়, ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী এস এম মনিরুজ্জামান, মাঠ সমন্বয়কারী সুব্রত টুডুু, মনিটরিং অফিসার মো. মাসুম বিল্লাল, প্রশিক্ষক ইমতিয়াজ আরাফাত, কমিউনিটি আর্কিটেকট এইচ এম হোসেনুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসক সুজন আরো বলেন, দেশের অন্যান্য এনজিও’র চাইতে ব্র্যাক ব্যতিক্রম। করোনাকালে তারা যে ভূমিকা রেখেছে তা অন্য এনজিওগুলোর জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। করোনা নির্ণয়ে পিসিআর টেস্ট ও দরিদ্র মানুষদের নগদ অর্থ সহায়তায় ৯৪ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা প্রদান করেছে। অথচ দেশে অনেক এনজিও লোক দেখানো কাজ করে বিদেশি ফান্ড এনে কার্যকর কিছু করে না। ব্র্যাকের সাথে চট্টগ্রামের দু’জন গুণী ব্যক্তি জড়িত। ওনারা এই প্রতিষ্ঠানকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, শহরের মানুষের আয় রোজগারের ব্যবস্থা থাকার পরও অনেকে আজ গৃহহীন। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। ২০৩১ সালের মধ্যে ইকোনোমিক বাংলাদেশ টাইগারে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই ক্রমাগত উন্নতিতে বিশ্ব এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশে এখন কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে এখন লোডশেডিং নাই বললেই চলে। অর্থনৈতিক প্রতিযোগীতায়ও আমাদের দেশ এখন এগিয়ে। এই অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। প্রশাসক ব্র্যাককে নগরের পতিত জমিতে ফলজ বৃক্ষ রোপন ও নগরীর সৌন্দয্যবর্ধন কার্যক্রমে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালে তারা এতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মনিরুজ্জামান নগরীতে তাদের যে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে তার একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় নগরের ১২টি ওয়ার্ডে ২৮টি দরিদ্র জনবসতিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

প্রত্যেক ধর্মেরই মর্মকথা শুদ্ধাচারী জীবনাচরণ ও শান্তিই হচ্ছে মূলবাণী:সুজন
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গার মর্ত্যে আগমনী হয় অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভশক্তির জাগরণী বার্তা জানিয়ে। এই করোনাকালে দেবীর আরাধনা উৎসব বাহুল্যতায় নয়,অন্তর থেকে স্বাত্তিক পূজা নিবেদন করে।

তিনি আজ অপরাহ্নে জামালখান কুসুম কুমারী সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চসিক পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয়া দুর্গাপূজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরা অন্তরে সৃষ্টিকর্তাকে ধারণ করেন। প্রত্যেক ধর্মেরই মর্মকথা শুদ্ধাচারী জীবনাচরণ এবং শান্তিই হচ্ছে মূলবাণী। আমরা যদি সত্য, সুন্দর, কল্যণ, সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির পূজারী হতে পারি, তা হলে মানবতার জয়গানে পৃথিবী মুখরিত হবে এবং জগৎ সংসার থেকে সকল কালিমা মুছে যাবে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত চট্টলবীর এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৫ সালে চসিকের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বপ্রথমবারের মত শারদীয়া দুর্গোৎসব উদযাপনের সূচনা করেন। এ ছাড়া তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনীতিক এবং তিনি ধার্মিক কিন্তু ধর্মান্ধ নন। তিনি সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য ধর্মাচারণের পথ সুগম করে দিয়ে গেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ধারণ করে। এ দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান মিলে-মিশে এক সাথে বসবাস করে। ধর্মে ধর্মে এমন অতুলনীয় সহাবস্থান পৃথিবীতে বিরল। তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থবিধি মেনে দুর্গোৎসব উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুর্গোৎসব চলাকালে শান্তি ও সম্প্রীতির অনুকূল পরিবেশ রক্ষায় চসিক সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

তিনি প্রতিমা বিসর্জনের সময় কোন ধরণের উশৃংখলা যাতে না হয় সে ব্যাপারে সকলকে সর্তক করে দেন।

চসিক পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কুসুম কুমারী সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চম্পা মজুমদার, পরিষদের সহ-সভাপতি আশুতোষ দে, সাধারণ সম্পাদক রতন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলের সভা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের সাথে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টাইগারপাসস্থ প্রশাসকের দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রশাসক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ায় মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা.দীপু মণি ও শিক্ষা উপ মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি কলেজের জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণে শিক্ষা উপ মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ শাহেদুল কবির চৌধুরী, প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান, সাদেক হোসেন পাপ্পু,শিক্ষক প্রতিনিধি সমরেন্দ্র নারায়ণ ধর, আবদুল হক।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *