ফুডপান্ডার সাড়ে তিন কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি,মামলা

অনলাইনে খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা ফুডপান্ডার খাদ্য সরবরাহ নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে নানা অভিযোগ থাকলেও এবার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বড় অংকের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়েছে।

ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল গত ১৫ অক্টোবর ফুডপান্ডার গুলশান-২ এর কার্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে যায়। এতে তারা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। টাকার অংকে ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দা ফুডপান্ডার গুলশান-২ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ভ্যাট ফাঁকির এ তথ্য পেয়েছে। বুধবার ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা করা হয়েছে।

ফুডপান্ডা থেকে খাবার অর্ডার করেন এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক সময় পছন্দের খাবার অর্ডার করার সরবারহের সময় অন্য খাবার পাওয়ার ঘটনাও আছে। অনেক সময় ক্রেডিট কার্ড থেকে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়ারও অভিযোগ আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফুডপান্ডার গ্রাহক বলেন, ‘একবার পরিবারের সবার জন্য কাচ্চির অর্ডার করার পর দেখি চিকেন বিরিয়ানি পাঠিয়েছে। এরপর থেকে অন্য মাধ্যমে খাবার সংগ্রহ করি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য ফুডপান্ডা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দীন অভিযান পরিচালনা করেন। ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটসংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটার তল্লাশি করা হয়। তল্লাশির একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ল্যাপটপে মাসিক বিক্রয়ের কিছু গোপন তথ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা ওই তথ্যসহ আরও কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ফুড পান্ডার বিরুদ্ধে ভুল সেবা কোড ব্যবহার, প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে ভ্যাট না দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হবে।

ফুডপান্ডার বিআইএন ০০২১৫৬০৬৬-০১০১। এটি প্রায় পাঁচ হাজার খাবারের দোকান থেকে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে ভোক্তার কাছে বাইকারদের মাধ্যমে সরবরাহ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফুডপান্ডার চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ফুডপান্ডা কমিশন পায়।

ফুডপান্ডা মূলত ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক (অনলাইন প্ল্যাটফর্ম) ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয় করে, যার প্রকৃত সেবার কোড এস-০৯৯.৬০। এই কোডের আওতায় ভ্যাট ৫ শতাংশ এবং বাড়ি ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।

জানা গেছে, ফুডপান্ডার ভ্যাটসংক্রান্ত দলিলাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা অর্থাৎ সেবার কোড এস-০৯৯.১০ এর আওতায় নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই কোডে নিবন্ধন গ্রহণ করে বাড়ি ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য মূসক পরিহার করে আসছে। এই কোডটি কোনোভাবেই তাদের ব্যবসার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও বাড়ি ভাড়ার ওপর অবৈধভাবে শূন্যহারে ভ্যাট সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করে আসছে।

তথ্য মতে, ফুডপান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড পণ্য বিক্রয় বাবদ ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬ এবং উৎসে কর্তন বাবদ এক কোটি ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৩ টাকাসহ মোট দুই কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫৩ টাকা ভ্যাট পরিহার করেছে। এই পরিহার করা ভ্যাটের ওপর সুদ বাবদ এক কোটি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ২৬০ টাকা প্রযোজ্য হবে। সর্বমোট প্রতিষ্ঠানটি মোট তিন কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত।

উদ্ধার করা কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ফুডপান্ডা লিমিটেড কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও পণ্য ক্রয়ের ওপর কোনো উৎসে মূসক পরিশোধ করেনি। জব্দ করা সিএ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উৎসে মূসক বাবদ এক কোটি ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৩ টাকা পরিহার করেছে। এই উৎসে ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৭২ লাখ ১২ হাজার ৭১৯ টাকা প্রযোজ্য।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *