বৃষ্টি উপেক্ষা করে খালের আবর্জনা পরিস্কারে সুজন

ঝুম বৃষ্টি। সময় সকাল ৭ টা। আর এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আজ বুধবার (৪ নভেম্বর) সকালে নগরীর বির্জা খাল থেকে আবর্জনা ও বর্জ্য পরিস্কারের মাধ্যমে মশকনিধন কার্যক্রমের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে যান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন।

দায়িত্বের কারণে কোন বাধা মানতে নারাজ তিনি। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করে মশকনিধন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে খবর পান নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ইছহাইক্যার পুলের নীচে বৃষ্টিতে জলজট সৃষ্টি হয়েছে। এই খবর শুনে সাথে সাথে ওই স্থানে পরিদর্শনে ছুটে যান প্রশাসক।

পরিদর্শনকালে প্রশাসক সুজন ‘ইছহাইক্যার পুলের’ নীচে ওয়াসার সংযোগ লাইনের দুটি বিশাল আকৃতির লোহার পাইপ দেখতে পান। আর এ পাইপের সংযোগ লাইনের সাথে বড় বড় কচুরিপানা, ঘাস, বিভিন্ন আগাছা, লতা-গুল্ম আটকে খালের পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে দেখে তাৎক্ষণিক কর্পোরেশনের শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত করে তিনি এসব আবর্জনা পরিস্কারের ব্যবস্থা নিয়ে পানি চলাচল স্বাভাবিক করেন।

এসময় প্রশাসক ‘ইছহাইক্যার পুলে’র নীচে থাকা ওয়াসার সংযোগ লাইনের পাইপের কারণে খালের পানি প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থল থেকে ফোন করেন। সে সময় স্থানীয় জনসাধারণ প্রশাসকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। প্রয়োজনে তিনি এ ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বলবেন বলে স্থানীয় জনসাধারণকে আশ্বস্থ করেন।

মশকনিধন কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী, স্থানীয় রাজনীতিক আহমদ ইলিয়াছ, মুক্তিযোদ্ধা এছাক মন্টু, সমাজসেবক শামসুল আলম, আবু জাফর, শফিউল আজম বাহার, মফজল আহমদ, নাঈম রনি, কফিল উদ্দীন, শহীদুল ইসলাম শহীদ, আনিসুল আজাদ, আকতার জামান রানা প্রশাসকের সাথে ছিলেন।

মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধনের কাজে নিয়োজিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক সেবকদের জন্য এমদাদ হাসান বাবু নামের স্থানীয় এক অধিবাসী সকালে নাস্তার ব্যবস্থা করেন। তাঁর এই আতিথেয়তা ও মানবিক সহায়তায় প্রশাসক সুজন প্রশংসা করেন এবং ওই অধিবাসীকে ধন্যবাদ জানান।

মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নগরীর চাক্তাই-মহেষখালসহ অধিকাংশ খাল এখন ময়লা আবর্জনায় ভরা। কর্পোরেশন মশক নিধনে এসব আবর্জনা পরিস্কারে কাজ শুরু করেছে। আগামীতে পরিস্কার হওয়া খাল-নালায় কোন ময়লা,আবর্জনা দেখলে কঠোর ব্যবস্থা নিব। আমি আজ সরেজমিন বির্জা খাল পরিদর্শন করে দেখলাম খালে পলিথিন,ককসিট !

এ সময় তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা, পুকুর, খাল-নালা পরিস্কার রাখুন। এটা আমার আপনার সামাজিক দায়িত্ব।

প্রশাসক নগরবাসীকে খাল-নালায় পলিথিন, ককসিট ও অপঁচনশীল দ্রব্য ফেলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা পলিথিন বর্জন করুন। পলিথিনের কারণে আজ কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে।

তিনি নগরবাসীকে নগরীর জীবনযাত্রা ব্যাহত করে এই ধরণের পণ্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানান। পলিথিন ব্যবসায়ীদেরও বিকল্প ব্যবসার পথ খুঁজতে বলেন।

তিনি বলেন, কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা ইতোমধ্যে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও স্টেশন রোডের ফলম-িতে ময়লা রাখার জন্য পলিথিনের বিকল্প থলে (ব্যাগ) সরবরাহ করেছি। আমি চাই আমোদের এই প্রিয় নগর সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে পরিস্কার রাখতে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক বলেন, ময়লা-আবর্জনার মধ্যে মশা বংশ বিস্তার করে। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম। ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি এডিশ মশা ফুলের টবে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি,রেফ্রিজারেটরের পানি ও ছাদের কর্নিশে জমা পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাই এডিশ মশার প্রজনন ধ্বংসে আমাদের নিজ বাসা-বাড়ি,আঙিনা পরিস্কার রাখতে হবে।

তিনি বলেন, মশার প্রজনন ধ্বংসে আমরা পরিবেশবান্ধব ওষুধ ছিটানোর কথা ভাবছি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শমতে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয়,এই ধরণের ওষুধ ছিটাতে হবে। আমরা এখন তা নিয়ে ভাবছি। নগরবাসী সচেতন হলে ডেঙ্গুসহ ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে প্রশাসক মন্তব্য করেন। তিনি সরকারি নির্দেশনা মেনে নগরবাসীর সহযোগীতায় চট্টগ্রাম নগরকে পরিচ্ছন্ন মানবিক ও করোনামুক্ত শহরে পরিণত করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *