এএসপি আনিসুল হত্যায় মামলা, গ্রেফতার ১০

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন ‘হত্যার’ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার আনিসুলের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি করেন; যার নম্বর-৯।

আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ফারুক মোল্লা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে দুপুরে শ্যামলীতে উপপুলিশ কমিশনারের (তেজগাঁও বিভাগ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

গতকাল সোমবার সকালে আদাবরের এই মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালে কর্মচারীদের পিটুনিতে এএসপি আনিসুল করিম নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, হাসপাতালের কর্মচারীদের এলোপাতাড়ি পিটুনিতে তিনি মারা গেছেন। এ ঘটনায় আটজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আনিসুলের পরিবারও একই অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছেন, ভর্তির পর পর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। পরে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুলকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাকে হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এর পর আরও দুজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরেন।

এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারীকে হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করতে দেখা যায়। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পেছনে বাঁধা হয়।

কিছুক্ষণ পর আনিসুলকে উপুড় করা হয়। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় একজন কর্মচারী তখন তার মুখে পানি ছিটান। পরে কর্মচারীরা কক্ষের মেঝে পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন।

সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়। ১৩ মিনিটের মাথায় তার বুকে পাম্প করেন সাদা অ্যাপ্রোন পরা নারী।

হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের খাতায় লেখা রয়েছে ‘ব্রট ডেড’ অর্থাৎ সেখানে নিয়ে আসার আগেই আনিসুলের মৃত্যু হয়েছিল।

আনিসুলের ভাই রেজাউল করিম সংবাদমাধ্যমকে জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে তার ভাই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার সকালে তারা তাকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান।

তিনি জানান, কাউন্টারে ভর্তির ফরম পূরণের সময় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাদের জানানো হয় আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এর পর দ্রুত হৃদ্রোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রেজাউল করিম আরও জানান, তার ভাইয়ের রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। কিছুটা হৃদরোগও ছিল। কিন্তু এ দুটির কোনোটিই প্রকট ছিল না। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিটুনিতেই সে নিহত হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ‘এএসপি আনিসুল করিমকে কয়েকজন মিলে চিকিৎসার নামে এলোপাতাড়ি মারধর করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রশিক্ষিত নয়, হাসপাতালের এমন কিছু ব্যক্তি তাকে চিকিৎসার নামে মারধর করে। এতে তিনি প্রাণ হারান।’

আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ফারুক মোল্লা জানান, ঘটনার পর হাসপাতালের আটজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মাইন্ড এইড হাসপাতালের সমন্বয়ক মো. ইমরান খান জানিয়েছেন, আনিসুল হককে জাতীয় মানসিক ইন্সটিটিউট থেকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। একে–ওকে মারধর করছিলেন। তাকে শান্ত করার জন্য ওই কক্ষটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

নিহত আনিসুল করিম বরিশাল মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনারের পদে ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরে। আনিসুল ৩১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। তিনি বরিশাল থেকে সোমবারই গাজীপুরের বাসায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২৪ ঘণ্টা/রিহাম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *