ক্যানসার ও করোনার আক্রান্ত নাট্যজন আলী যাকের আর নেই

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যজন আলী যাকের আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ৭৬ বছর বয়সে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আলী যাকের রেখে গেছেন স্ত্রী নাট্যজন সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে রেডিও উপস্থাপক শ্রিয়া সর্বজায়াসহ অসংখ্যক ভক্ত-অনুরাগীকে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, ‘যাকের ভাই গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।’

তিনি বলেন, ‘পারিবারিকভাবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি দাফনের বিষয়টি। উনাকে বিদায়ের জন্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট থেকে কোনও আনুষ্ঠানিকতার সুযোগ আর পাচ্ছি না। কারণ, উনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন।

গত চার বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন গুণী এই শিল্পী। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার সিসিইউতে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নিয়ে।

তখন থেকে নাগরিকই তাঁর ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি।

পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে।

টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশিত হয়েছে বই—‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’। শখ করে ফটোগ্রাফিও করেন তিনি।

আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।

স্ত্রী সারা যাকেরকে নিয়ে গড়ে তোলেন দেশের বৃহৎ বিজ্ঞাপনী সংস্থা। সাম্প্রতিক সময়ে যার হাল ধরেছেন তারই পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের।

নাট্যজন আলী যাকেরের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে। ছোট পর্দায় ও মঞ্চে সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।

আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর জানান, আলী যাকেরের মরদেহ শুক্রবার বেলা ১১টায় নিয়ে যাওয়া হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে।

সেখানে একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিককে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জানান।

জুমার পর বনানী কবরস্থানে আলী যাকেরকে দাফন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বনানী কবরস্থান মসজিদেই হবে তার জানাজা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *