হাকীমপুরীসহ ২২ জর্দা-খয়েরে ক্ষতিকর ক্যামিকেলের সন্ধান

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাদের অন্যতম প্রিয় খাবার পানের সঙ্গে শখ করে নানা ধরনের তামাকপাতা- জর্দা ও খয়ের খেয়ে থাকেন। কিন্তু শখের এ খাবারে এমন সব ক্যামিকেল ব্যবহার হচ্ছে যা মানুষের জন্য চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এমন বহুল ব্যবহৃত ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুলের মধ্যে ক্ষতিকর ভারী ক্যামিকেলের সন্ধান পেয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে মাড়ি ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বিএফএসএর এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাকীমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুলে বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে।

এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিকর এসব উপাদান দূর করার পরামর্শ দিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, সংশোধন না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।

বিএফএসএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা পানের সঙ্গে খয়ের খান তাদের জন্য রয়েছে আরও বড় দুঃসংবাদ। কারণ এক ধরনের গাছের বাকল থেকে এই পণ্যটি তৈরির কথা থাকলেও সেটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে শুধুমাত্র ক্যামিকেল রং দিয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে ফার্নিচারের বার্নিশে ব্যবহারের জন্য যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সেগুলো দিয়েই সরাসরি খয়ের তৈরি হচ্ছে। যার মধ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতু লেড, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়ামের মতো পদার্থ পাওয়া গেছে।

এতে বলা হয়, হকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা গুল ও খয়েরে বিষাক্ত হেভি ক্যামিকেল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ৬ প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও তিন প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার সবগুলোতে হেভি ক্যামিকেল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

নমুনা পরীক্ষা করা পণ্য গুলোর মধ্যে রয়েছে, গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ইগল গুল, মোস্ফফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হকিমপুরী জর্দা, গুরুদেব জর্দা শাহজাদি জর্দা (নির্মলের), মহিউদ্দিন জর্দা, হাকিমপুরী জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহী হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।

সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, দেশের অনেক মানুষ পান জর্দায় আসক্ত। কিন্তু এই জর্দা খয়ের বা গুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলোতে ক্ষতিকর ধাতু রয়েছে। যা নিয়মিত খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বিএফএসএর চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান জানান, দেশের অনেক মানুষ পান জর্দায় আসক্ত। কিন্তু এই জর্দা খয়ের বা গুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলোতে ক্ষতিকর ধাতু রয়েছে। যা নিয়মিত খেলে ক্যনসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি জানান, বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন ২২টি ব্র্যান্ডের জর্দা গুল ও খয়েরে নমুনা নিয়ে ল্যাবে টেস্ট করা হয়। যার প্রত্যেকটিতে বিষাক্ত হেভি ক্যামিকেল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থায় যাচ্ছি। প্রথমে আমরা তাদের ডাকবো। তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে সংশোধন করতে বলা হবে। এরপর যদি তারা সংশোধন না হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।

তিনি বলেন, বাজারে যেসব জর্দা গুল ও খয়ের বিক্রি হচ্ছে তার সবগুলোই ক্ষতিকর। এগুলো খেলে মানুষ বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। কারণ এসব পণ্য মানুষ সরাসরি খায়। ফলে পাকস্থলি আক্রান্ত হয়। এতে করে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগে। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে এসব ক্ষতিকর পণ্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ এসব পণ্যের চাহিদা না কমালে বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, সদস্য মাহাবুব কবীর, মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, প্রফেসর মো. আব্দুল আলীমসহ সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *