আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ঋতু পরিক্রমায় শীত জনজীবনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যা খুবই কষ্টকর। এরই মধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। সারাদেশে তাপমাত্রা কমে এসেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারদিক। কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় দূরপাল্লার যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
শীতে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠাপায়েসের আয়োজন চলে গ্রামাঞ্চলে। এই নগরেও এখন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার খরণা ইউনিয়নের হযরত শাহাজাহান আউলিয়া (রাঃ) এতিমখানা, হেফজখানা ও এবতাদায়ী মাদ্রাসার শীতার্ত এতিম শিশুদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে এক ঝাঁক উজ্জীবিত তরুণদের ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্রেন্ডসশীপ (এফ এন্ড এফ)।
মহান বিজয় দিবস উদযাপনের দিন সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে করোনার এই দুযোর্গের মাঝেও দিনটিকে ব্যতিক্রমভাবে রাঙাতে এতিম শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে হযরত শাহাজাহান আউলিয়া (রাঃ) এতিমখানা, হেফজখানা ও এবতাদায়ী মাদ্রাসায় ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্রেন্ডসশীপ (এফ এন্ড এফ) দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনের মধ্যে ছিলো ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ ক্লিনিক্যাল এবং কসমেটিক ডার্মাটোলজিষ্ট ম্যাক্স হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ নুসরাত উর্মির নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম এতিম শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করে।
এছাড়াও শীতার্ত এতিম শিশু ও শিক্ষকদের মাঝে কম্বল বিতরণ, ঘুমানোর জন্য পাটি, করোনা সচেতনায় মাস্ক প্রদান, শীতকালীন প্রসাধনী, এতিম শিশুদের মাঝে খেলার উপকরণ, বৈদ্যুতিক বাতি ও ভালো খাবারের ব্যাবস্থা সহ সকল এতিম শিশুদের মাঝে জাতীয় প্রতাকা প্রদানের মাধ্যমে বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজন করা হয় ।
আয়োজক এফ এন্ড এফ’র মুখপাত্র জানান, এতিমখানাটি উপজেলা সদর থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় মানবিক ও দানশীল মানুষগুলোর সাহায্য থেকে বঞ্চিত। শহরঞ্চালের এতিখানাগুলো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দানবীর মানুষগুলো নিয়মিত সাহায্য পেলেও গহীন গ্রামের এই এতিমখানাটি প্রয়োজনীয় সরকারী- বেসরকারিভাবে তেমন একটা পায় না। তাই আমরা ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্রেন্ডসশীপ (এফ এন্ড এফ) পরিবারের মানবিক দাতা সদস্যদের আর্থিক সহযোগীতায় সুবিধা বঞ্চিত, শীতার্ত এই এতিম শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে শহর থেকে গ্রামে ছুটে এসেছি।
ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্রেন্ডসশীপ (এফ এন্ড এফ) পরিবার ইতিপূর্বে ঢাকা মিরপুরস্থ একটি বৃদ্ধাশ্রমে রমজান মাসের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম। করোনা কালীন লকডাউনের সময় আমরা এফএন্ডএফ গ্রুপ থেকি নিয়মিত ডক্তরস লাইভের মাধ্যমে সংকট কালীন সময়ে অসুস্থ মানুষগুলোর পাশে ছিলাম।
উক্ত এতিমখানার সুপার হাফেজ মাওলানা জাকির জানানঃ এতিমদের নিয়ে সব সময় নানা সংকটে ও অভাবে থাকি। এতিমদের মুখে দু’বেলা ডাল-ভাত তুলে দিতে পারলেও শীত নিবারণের মতো পর্যাপ্ত পোশাক দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্রেন্ডসশীপ(এফ এন্ড এফ) নামক সংগঠনকে আমাদের এতিম শিশুদের পাশে দাঁড়ানোয় আমরা তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান ও এতিমখানা পরিচালনা পরিষদ সদস্যবৃন্দ সহ দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্রেন্ডসশীপ (এফ এন্ড এফ) গ্রুপের পরিচালনা সদস্য মোহাম্মদ হাসানুল বান্না, বিকাশ মিত্র, মুরাদ শেখ, মিলন দাশ, পুষ্পিতা বড়ুয়া, মনোবিজ্ঞানী আকবর হোসেন, ডা: স্বপ্নীল প্রহ্লাদ, ডা: ফাতেমা হাসান সহ এফ এন্ড এফ পরিবারের দাতা সদস্যরা সহ উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাফেজ বৃন্দ এবং শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply