হটাৎ করে বাংলাদেশে ক্রিকেটের এখন একটি সংকটকাল চলছে। এই সংকটকালের বিতর্কের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
কদিন থেকেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে বেশ সমালোচনার ঝড় দেখা যায়। এরই মধ্যে পাপনের ক্যাসিনো খেলার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে যেন আগুনে ঘি ঢালার মতে অবস্হা দাড়ায়। ভিডিওটি নজরে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। যদিও এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানাননি তিনি।
সেই বিশ্বকাপে সাকিবের ফটো সেসনে না আসা নিয়ে পাপনের মন্তব্য, এরপর হঠাৎই সাকিবের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের আন্দোলন, পরবর্তী ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েও আইসিসিকে না জানানোর অপরাধে হঠাৎই সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় বিসিবি সভাপতির প্রতি আঙুল তুলেছেন ক্রিকেট ভক্তরা। অনেকেই আন্দোলন করেছেন বিসিবি সভাপতির পদত্যাগ নিয়ে।
পাপনের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই দুর্গতি হয়েছে বলে একাধিক মহল মনে করছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যেই অনেকে এখন এ ব্যাপারে সরব হয়েছে। তারা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছেও অনুযোগ করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শুধু পাপন একা নন, বাংলাদেশে ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের যে সমস্ত প্রভাবশালী লোকজন রয়েছে, যারা ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডে পাপনের বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে পরিচিত- তাদের মধ্যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং নানারকম অপকর্মের অভিযোগ এখন প্রকাশ্যে এসেছে। বিসিবির একজন পরিচালক ইতিমধ্যে ক্যাসিনো বাণিজ্যের অভিযোগে কারান্তরীণ রয়েছেন। এই অবস্থায় বিসিবি নতুন করে পুনর্গঠনের বিষয়টি সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে, এই মুহূর্তে ক্রিকেটের সংকটকালে নাজমুল হাসান পাপনের সরে যাওয়াটাই উত্তম। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, ভারত সফর শেষ হওয়ার আগে পাপন সরে গেলে সেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ভারত সফরের পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ক্রিকেটারদের সঙ্গেও নাজমুল হাসান পাপনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের সময় পাপন ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। যার ফলে অনেক ক্রিকেটারই বিব্রত হয়েছেন।
একাধিক সূত্র বলছে যে, পাপনের বিকল্প এরই মধ্যে খোঁজা শুরু হয়েছে। একাধিক বিকল্প সরকারের কাছে রয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হযেছে নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচন এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এ ধরনের বোর্ড ভেঙে দিলে তা আইসিসি নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর খড়গ নেমে আসেতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
সেজন্য বিষয়গুলোকে আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি বা পরিচালকমণ্ডলীকে হুটহাট পরিবর্তন করা যায় না। এটা সরকারনিয়ন্ত্রিত কোনো সংস্থাও নয়। বরং এটি স্বাধীন সক্রিয় সংগঠন বলেই স্বীকৃত। সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বিভিন্ন দেশ আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে। সমগ্র বিষয়গুলো বিবেচনা করে পাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত যে পাপনের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে এবং পাপনের সরে যাওয়ার একটি পথ খোঁজা হচ্ছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে সাবের হোসন চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা হোক অথবা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক মাশরাফিকে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
Leave a Reply