লোহাগাড়ায় হাম-রুবেলা টিকা দেয়ার পর সাত বছরের শিশুর মৃত্যু !

এ. কে. আজাদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজান মকবুল সিকদার পাড়ায় হাম রুবেলা টিকা দেয়ার পর পরই সাত বছরের এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত শিশু নাওরাত হানিফ(৭) ওই এলাকার মো. হানিফ চৌধুরী শিমুলের মেয়ে বলে জানা গেছে।

রবিববার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন সিকদার। সারা দেশের ন্যায় একযোগে লোহাগাড়ায় হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয়।

নিহতের মা রাবেয়া বেগম বলেন, টিকা দেয়ার পর পরই আমার মেয়ে নাওরাত পাশে এসে মাথা ঘুরছিল বলে মাটিতে পড়ে যায়। এর পরপরই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় সে। আমার সন্তানকে তারা ইচ্ছে করে হত্যা করেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সন্তান হত্যার বিচার চান।

এদিকে, নাওরাত জন্ম হওয়ার আগে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল হানিফ চৌধুরী শিমুল। ২ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। গত ১৫ ডিসেম্বর দেশে আসেন। ২ সপ্তাহ যেতে না যেতে দেখতে হল সন্তানের লাশ। সন্তান হারিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছে বাড়ির এক কোণায়।

প্রবাসী শিমুল জানান, টিকা দেয়ার পর সন্তান অসুস্থ হওয়ার খবর জেনে বাড়িতে এসে মোটরসাইকেল নিয়ে লোহাগাড়া সদরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, টিকা দেয়ার পরপরই নাওরাত মারা যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই টিকা প্রদানকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জেবুন্নিছাসহ তিনজন ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে চাইলে স্থানীয়রা টিকা কেন্দ্র ঘিরে রাখেন।

ঘটনার পরপরই লোহাগাড়া থানা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শামসুল আলম চৌধুরী চেয়ারম্যান বাড়িস্থ টিকাদান কেন্দ্রে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

স্বাস্থ্য পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে টিকা প্রদান করেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক জেবুন্নিছা। এসময় উপস্থিত সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক সীমা চৌধুরী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী ঝর্ণা রাণী দাশ।

ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ, লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ জাকের হোসাইন মাহমুদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা: জাহেদুল ইসলাম।

নিহতের চাচা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হাম-রোবেল টিকা দেয়ার পর আমার ভাতিজি নাওরাত অসুস্থ হলে স্বাস্থ্য কর্মীদের জানানো হয়। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলেন। তবে কোন প্রকার এন্টি ভ্যাকসিন নাই বলে সাফ জানিয়ে দেন। তবে, কেন এন্টি ভ্যাকসিন ছিলাে না এমন প্রশ্ন রাখেন পরিদর্শনে আগতদের। তিনি স্বাস্থ্য কর্মীদের অবহেলার কারণে তার ভাতিজি মারা গেছে বলে জানান।

স্বাস্থ্য পরিদর্শক জেবুন্নিছা বলেন, সাড়ে ১০টার দিকে টিকা প্রদান করি। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি টিকা প্রদানের পর নাওরাত হানিফের খিচুনি হয়। তাই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দিই। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে খুবই খারাপ লাগছে বলেও জানান তিনি। নাওরাতকে টিকা দেয়ার পুর্বে এলাকার আরও ৬৫/৭০ জনকে টিকা দিয়েছি।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, নাওরাত নামের এক শিশু টিকা দেয়ার পর মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। শিশুটি টিকার কারণে মারা গেছে নাকি অন্য কোন কারণে মারা গেছে তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না।

লোহাগাড়ার ওসি মো. জাকের হোসাইন মাহমুদ বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছে, আমিও অনেক্ষণ ঘটনাস্থলে ছিলাম। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাশ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে । এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত থানায় লিখিত কোন অভিযোগ হয়নি বলেও জানান ওসি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *