টাকা ছাড়া মিলছেনা চিকিৎসা, নানা অনিয়মে চলছে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : চিকিৎসা কার্যে অবহেলা, অর্থ আদায়,রোগী ও রোগীর অভিভাবকদের সাথে রূঢ় আচরণ করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, রোগী বাণিজ্য করে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্যাথলজি থেকে নানা উপঢৌকন গ্রহণ করছেন চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা।

এমনই নানা অনিয়ম আর রোগী বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে ঢিমতালে চলছে লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তাকে জানিয়েও মিলছে না সুফল।

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের থেকে চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন- ‘৫ ডিসেম্বর আমার স্ত্রী শারমিন আক্তারের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ভর্তি করাই। যার রেজি নং ১১৯/১১৯ তাং ০৫/০১/২০২১. চেকআপ করা হবে বলে আমাকে হ্যান্ডসগ্লােভসের জন্য নিচে ওষুধের দোকানে পাঠানো হয়। আমি দ্রুত হ্যান্ডগ্লোভস নিয়ে আসার পরে জানতে পারি আমার স্ত্রীর চেকআপ হয়ে গেছে। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে বলে জনসেবা প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠান রোগীসহ আমাকে। রিপোর্ট নিয়ে আসার পরে ‘বাচ্চার অবস্থা আশঙ্কাজনক’ বলে আমাকে প্রাইভেট হাসপাতাল বা লক্ষ্মীপুরে অন্য কোনো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন সিনিয়র নার্স আরজু। দুপুর একটার দিকে রোগী নিয়ে আসলেও প্রায় ৫ ঘন্টা পর বহু দেন-দরবার করায় ভর্তি নেয়ার জন্য বলেন একনার্সকে নির্দেশ দেন আরজু। এদিকে রোগী ‘ব্যাথায় চিৎকার চেচামেচি’ করলে ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করতে হবে বলে তড়িঘড়ি করতে থাকেন ওই নার্স। প্রথমে ইনজেকশন নাই বলে সাফ জানিয়ে দেন হাসপাতালের এক কর্মচারী। পরে ১’শ টাকা হাতে গুঁজে দিলে ইঞ্জেকশন বের করে রোগীকে পুঁশ করেন।’

ওই ভুক্তভোগী আরো বলেন-‘দুপুর একটার দিকে রোগীকে হাসপাতালে আনার পরে কোনো চিকিৎসক ছিল না। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রদত্ত রোগীর ‘হলুদ বই’ দেখানোর পরেও কোন চিকিৎসককে কল করা হয়নি।’

দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা পরে উপায়ান্তর না পেয়ে ও নিরুপায় হয়ে ওই ভুক্তভোগী তার রোগীকে অন্যত্রে নিয়ে যান বলে এপ্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক শামিমা নাসরিন নিজেই সিজার করেন।

জানা গেছে, নার্স আরজু ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে চিকিৎসার নামে বেনামে সাধারণ অসহায় রোগীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। যারা টাকা পয়সা দেয় তাদের চিকিৎসা আছে। যারা টাকা পয়সা দেয় না, দিতে পারে না তাদের হাসপাতাল থেকে নানা অজুহাতে ছেড়ে দেয়া হয়।

চিকিৎসা কাজে দায়িত্ব অবহেলার খবর এপ্রতিবেদকের কাছে আসার পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাক্তার জাকির হোসেনকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি পরদিন সশরীরে হাসপাতাল গিয়েও তাকে দেখতে না পেয়ে আবারো একাধিকবার মোবাইল ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘটনার এক সপ্তাহ পর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জাকির হোসেনকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়। বিস্তারিত শোনার পর তিনি বলেন-‘ কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তবে ঘটনার দিন হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তন্ময় পালকে পাওয়া যায়। তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে তিনি ইমার্জেন্সির দায়িত্বরত ডাক্তার ছিলেন। তবে কোনো কথা বলতে হলে ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে’এমনটি সাফ জানিয়ে দিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বাহারুল ইসলাম ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন ও মোবাইল ফোনে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *