আয়া নার্স ও ডায়গনস্টিক কর্মী হলেও এরা শিশু চোর,৫ মাস পর ধরা

চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানা রেয়াজউদ্দিন বাজারের আমতল এলাকা থেকে গত ৫ মাস আগে চুরি হওয়া এক ভিক্ষুকের সাত মাস বয়সি শিশুপুত্রকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় নবজাতক শিশু চোর চক্রের মূলহোতাসহ ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

শনিবার দিবাগত রাতে সংঘবদ্ধ এ চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের দেওয়া তথ্য মতে রোববার ভোর রাতে নগরীর দামপাড়া পল্টন রোডের এক দম্পতির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। দুই মাস বয়স থাকতে শিশুটি চুরি করেছে চোরের দল।

গ্রেফতার হওয়া শিশু চোর চক্রের তিন সদস্যদের মধ্যে মো. আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক (৩৫) এ চোর চক্রের মূল হোতা। পারভীন আক্তার (৩৫) এবং নগরীর ন্যাশনাল হাসপাতাল ও সিগমা ল্যাবে কর্মরত রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট সুজিত কুমার নাথ (৪৫) আফসারের সহযোগী। বিভিন্ন হাসপাতালের আয়া,নার্স এবং ডায়াগনস্টিক কর্মী সেজে এরা হতদরিদ্র পরিবারের শিশু পুত্র চুরি করায় এদের মূল পেশা।

রবিবার বিকেলে কোতোয়ালি থানা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।

তিনি বলেন, ওরা সংঘবদ্ধভাবে নবজাতক শিশু চুরি করে নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে আসছে। এই চোর চক্রের সাথে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আয়া, নার্স, দারোয়ান ও বিভিন্ন কর্মচারীরা সম্পৃক্ত রয়েছে। এরা সাধারণত হতদরিদ্র পরিবারকে টার্গেট করে তাদের কাছ থেকে শিশু নবজাতক সন্তান চুরি করে। পরবর্তীতে তাদের কোন স্বজনের সন্তান দাবী করে সমাজের নিঃসন্তান পরিবারের হাতে বেশি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন।

তিনি বলেন, গত ২৬ মে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে ভিক্ষুক শেফালীর ২ মাস বয়সী শিশু সন্তান চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এধরনের একটি চক্রের সন্ধান পায়। শনিবার রাতে এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মেহেদী হাসান জানান, শেফালির শিশুপুত্রকে চুরি করে নিঃসন্তান পবন কান্তির কাছে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। পুলিশ এ ধরনের চুক্তিপত্রের কপি ও ভুয়া মৃত্যু সনদও জব্দ করেছে বলে জানান তিনি।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ৫ মাস আগে গত ২৭ মে শেফালি বেগম নামে এক ভিক্ষুক তার শিশুপুত্র চুরির কথা উল্লেখ করে ২৮ মে কোতোয়ালি থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, চোর সিন্ডিকেটটি নগরীর কাজির দেউরি এলাকায় গিয়ে তার শিশুকে ভাল জামা কাপড় কিনে দেওয়ার নাম করে রেয়াজউদ্দিন বাজারে তাকে ও তার শিশুকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কৌশলে শিশুটি চুরি করে তারা পালিয়ে যায়। আরো খবর : নবজাতক শিশু চোর চক্রের মূলহোতাসহ ৩ জন গ্রেফতার

ওই চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে শেফালি বেগমের শনাক্ত করা মার্কেটটিতে যায়। সেখানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে চোরচক্রকে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ ইপিজেড থানা এলাকা থেকে শিশু চুরির অভিযোগে ইকবাল নামে একজনকে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে গ্রেফতার করার পর তাকে ফুটেজ দেখালে সে শেফালির বাচ্চা চুরির বিষয়টি স্বীকার করে নেন। এ সম্পর্কে সে আদালতে জবানবন্দিও দেন।

তার কাছ থেকে নবজাতক শিশু চোরের মূলহোতা আফসারের তথ্য পাওয়া যায়। শনিবার আফসারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে কক্সবাজারের কলাতলি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে থেকে সুজিত এবং নগরীর অক্সিজেন এলাকার সৈয়দপাড়ায় এক বাসা থেকে পারভীনকে গ্রেফতার করা হয়।

তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী নগরীর দামপাড়ায় পল্টন রোডে জনৈক পবন কান্তি নাথের বাসা থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা শিশুকে আদালতের মাধ্যমে মার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *