ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা তৈরী ও বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে ক্যাব’র মানববন্ধন

২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ : বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারনে দেশ বিভিন্ন দিকে উন্নয়ন হলেও খাদ্য ব্যবসায় জড়িত কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে এখনও সেভাবে অগ্রগতি লাভ নাই। সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভাবে বিধিমালা তৈরী না হওয়ায় এাখাতে শৃংখলা আসছে না। ডুবো তেলে ভাজা পুড়া, খাবারে অতিরিক্ত তেল ও চর্বি ব্যবহার, ফাস্ট ফুড, টেস্টিং সল্ট, ডালডা ইত্যাদির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে চট্টগ্রামে হ্দরোগী ও ক্যান্সারের রোগী অনেক বেশী। অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও ডুবো তেলে ভাজাপুড়াই ট্রান্স ফ্যাট। আর খাদ্যে অতিমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট মানুষের হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জঠিল রোগের মূল কারন। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণের জন্য বিধিমালা তৈরী ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্ত্বরে “স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা তৈরী ও বাস্তবায়নের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে উপরোক্ত দাবি জানানো হয়।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব চট্টগ্রাম ডিপিও জহুরুল ইসলাম ও ক্যাব যুব গ্রুপের সংগঠক চৌধুরী জমিসুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ঠ সাংবাদিক ও ক্যাব বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম নাসিরুল হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক গিয়াস উদ্দীন, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, দক্ষিন জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, ক্যাব খুলসীর সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, সদরঘাট থানা সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব জামাল খানের সভাপতি সালাহ উদ্দীন আহমদ, ক্যাব লালখান বাজারারে ঝর্না বড়ুয়া, ক্যাব পূর্ব ষোল শহরের অধ্যক্ষ কে এম মনিরুজ্জমান, আবু ইউনুচ, ক্যাব দেওয়ান বাজারের পারভীন আকতার, সংস্কৃতি কর্মী সীমা বড়ুয়া, ক্যাব বন্দরের আলমগীর বাদসা, ক্যাব আকবর শাহ থানার সালমা আকতার শিলা, আমেরিকান কর্নার চট্টগ্রামের রুমা দাশ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস হচ্ছে পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও), যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেল (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেশন করা হলে তেল তরল অবস্থা থেকে মাখনের মতো জমে যায়, এই প্রক্রিয়ায় ট্রান্সফ্যাটও উৎপন্ন হয়। এই শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ উচ্চহারে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যু, স্মৃতিভ্রংশ (dementia) এবং স্বল্প স্মৃতিহানি (cognitive impairment) জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫,৭৭৬ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ি ট্রান্সফ্যাট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত “ÒWHO REPORT ON GLOBAL TRANS FAT ELIMINATION ২০২০” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বক্তাগন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার অনেক নির্দেশনা ও বিধিবিধান জারি করলেও মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকির অভাবে সরকারের অনেকগুলি ভালো উদ্যোগের সুফল জনগন পায় না। তাই শুধু বিধিমালা তৈরী করলে হবে না। এর মাঠ পর্যায়ে যথাযথ বাস্তবায়নে ও নাগরিক পরীবিক্ষন জরুরি। তা না হলে কাজীর গরু খাতায় থাকবে গোয়ালে নয়-সে অবস্থা হবে। সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারন করে দিয়েছে, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে যথাযথ নজরদারি না হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর কার্যকর করবে না। যেরকম সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমানোর পরও ভোক্তা পর্যায়ে তার সুফল আসে নি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *