হালদা নদীতে মাটি ও বালি পাচারের মহোৎসব; হুমকীর মুখে রাবার ড্যাম

ফটিকছড়ি প্রতিনিধিঃ প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন নিশিদ্ধ হলেও দিন-রাত পাচারের মহোৎসব চলছে। এখান থেকে মাটি ও বালি পাচারের আ’লীগ-বিএনপি-জামায়াত শিবিরের লোকজন মিলে গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হালদা নদীর মৎস ক্ষেত্র, ভূজপুর রাবার ড্যাম এবং হালদা নদী ভাঙ্গণ রোদে চলমান সিসি ব্লক স্থাপন ও ভেড়ী বাঁধ স্থাপনের ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বার বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও এই সিন্ডিকেটটির তৎপরতা বন্ধ করতে পারছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশে বিশ্বের এক মাত্র প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর সকল বালির মহাল ইজারা প্রদান, বালি ও মাটি তোলা, চরকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু এই বিধি নিষেধ অমান্য করে ফটিকছড়ি ও ভূজপুর এলাকার বিশাল একটি সিন্ডিকেট নির্বিচারে রাত দিন বালি উত্তোলন করছে, নদীর পাড় ও চর কেটে সড়ক নির্মান, বাড়ি ঘর নির্মাণসহ নানান কাজে ব্যবহারের জন্য পাচার করছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে নানান ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা, বিএনপি নেতা ও জামায়াত শিবির নেতারা।

সরেজমিনে পরিদর্শনে স্থানীয়রা জানায়, হালদা নদীর ভূজপুর রাবার ড্যামের নীচে (দক্ষিণে) আওয়ামীলীগ ও জামায়াত শিবিরের একটি সিন্ডিকেট বিগত এক মাস যাবৎ নদীর ধার, চর ও পাড় কেটে মাটি পাচার করছে। প্রতি ৫মিনিটে এক একটি ড্রাম ট্রাক ভর্তি হচ্ছে মাটি ও বালি। সেখানে মাটি কাটার শ্রমিকরা স্থানীয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে জানান, মাটি ও বালি গুলো সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এদিকে প্রতিদিন পাইন্দং ইউনিয়নের যুগিনী ঘাটা, ফকিরা চাঁন, সুন্দরপুরের ছোট ছিলোনিয়া, এক্কুলিয়া, পাঁচ পুকুরিয়া, সুয়াবিলের সিদ্ধাশ্রমের আশে পাশে, বারমাসিয়া ঘাট, নাইচ্চের ঘাট, আজিমপুর ঘাট, নাজিরহাট পৌরসভার কুম্ভার পাড়, নারায়ণহাট ইউনিয়নের কুয়ারপাড়া, হাপানিয়া, পিলখানা, বারমাসিয়া খালের মাথা, মির্জারহাট এলাকা থেকে জীপ, ট্রাক, ট্রলী ভরে প্রতিটি স্পর্ট থেকে হাজার হাজার গাড়ি বালি ও মাটি পাচার করছে। প্রতি গাড়ি মাটি ও বালি ৩-৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হালদা নদীর মৎস ক্ষেত্র, ভূজপুর রাবার ড্যাম এবং হালদা নদী ভাঙ্গণ রোদে চলমান সিসি ব্লক স্থাপন ও ভেড়ী বাঁধ স্থাপনের ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প।

সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, হালদা নদী থেকে যে হারে মাটি ও বালি উত্তোলন করে পাচার চলছে তাতে ১৫৭ কোটি টাকার ভেড়ী বাঁধ ওনসিসি ব্লকের উন্নয়ন প্রকল্পে গুড়ে বালি হচ্ছে।

সুন্দরপুর এক্কুলিয়া এলাকার বাসিন্ধা সফিউল আজম জানান, হালদা নদীর বালি মাটি পাচারকারীদের গাড়ির শব্দে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। ইউএনও অভিযান করে চলে যাবার পর আবার সক্রীয় হয় পাচারকারী সিন্ডিকেট।

পাইন্দং এলাকার এক ইট ভাটার মালিক জানান, ইট তৈরীর জন্য আমরা মাটি কাটি সত্য। কিন্তু নদী থেকে মাটি ও নদীর পাড় কাটি না। এখন সড়ক উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের কথা বলে একটি সিন্ডিকেট রাত দিন নদী থেকে বালি ও মাটি পাচার করছে।

নারায়ণহাট ইউনিয়নের এক বাসিন্ধা রহিম সিকদার জানান, মাটি ও বালি পাচারকারীরা অধরা। তারা ক্ষমতাসীন দল ও কতিপয় জনপ্রতিনিধির নাম ব্যবহার করে রাত দিন এমন কাজ করেই চলছে।

ভূজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বাবু রনজিৎ কুমার জানান, অভিযোগ পেয়ে একবার হালদা নদীতে লোকজন পাঠিয়েছিলাম।তখন কাউকে পাওয়া যায়নি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিসান বিন মাজেদ বলেন, প্রতিদিন বালি চোর, মাটি চোর ও পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরা বৃহৎ সিন্ডিকেট এবং দূর্ত। আমরা উপজেলা থেকে বের হবার পর পরই তারা পালিয়ে যায়। তাই ছদ্মবেশ ধারণ করেও অভিযান চালানো হচ্ছে।

এব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল আরেফিন বলেন, কয়েকদিন আগে হালদা নদীর চর কেটে মাটি পাচার করার অপরাধে কয়েক ব্যক্তিকে অর্থ দন্ড করা হয়েছে। ৮/১০টি জীপ ট্রাক ট্রলী সহ খনন যন্ত্র আটক করা হয়েছে। এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এলাকার বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ পাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে নদীর চরের দখলদার ব্যক্তিরা সোচ্ছার হলে এসব মাটি পাচার সিন্ডিকেট দ্রুতই নির্মুল হবে। কিন্তু তারা মুখ খুলে না এবং প্রশাসনকে সহযোগীতা করে না।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *