এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সীতাকুণ্ডের বাকপ্রতিবন্ধী দুইবোন ইরিনা-শারমিন

বাকপ্রতিবন্ধী দুই বোন ইরিনা-শারমিন

ইরিনা আক্তার ও শারমিন আক্তার দুইবোন। তারা জন্মগতভাবে বাকপ্রতিবন্ধী। কিন্তু এ প্রতিবন্ধকতা তাদের দমাতে পারেনি। কৃতিত্বের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে পিএসসি। এবার তারা দিচ্ছে জেএসসি পরীক্ষা।

অন্য আর ৫টি স্বাভাবিক শিশুর মতোই তারা লেখাপড়া শিখছে। সাধারণত বোবারা বোবা স্কুলেই লেখাপড়া করে। কিন্তু এ দুইবোন অন্য সব সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথেই স্কুলে পড়ালেখা করছে। তারা এবার সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ সোনাইছড়ি মোস্তফা হাকিম কেজি এন্ড জুনিয়র হাই স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, তারা দুইবোন হাতের ইশারায় সব কিছু বুঝে নেয়। বাকিটা বোর্ডে লিখে দিতে হয়। তারপরও শিক্ষকদের আলাদা একটা নজর তাদের দিকে দিতে হয়। সব শিক্ষকই তাদের প্রতি আন্তরিক। ফলে তারা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। তারা পিএসসি পরিক্ষায়ও ভালো রেজাল্ট করে।

নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে তারা পরিক্ষা দিচ্ছে। দেখে বুঝার উপায় নেই তারা দুইবোন যে বাক-প্রতিবন্ধি।

সীতাকুণ্ড উপজেলার ৮ নং সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকার মো. আবদুল আজিজের ২ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে দুইজনই জন্মগতভাবে বাক প্রতিবন্ধি। ইরিনা আক্তার ও শারমিন আক্তার দুইবোন বাকপ্রতিবন্ধি হয়েও লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাল ছবিও আঁকতে পারে।

বাবা আব্দুল আজিজ ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, তারা যে বাকপ্রতিবন্ধি এটা মানতে রাজি নয় তারা। ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ার দিকে প্রচন্ড ঝোঁক তাদের। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম পড়ালেখা ওদের ভাগ্যে সম্ভব নয়। কিন্তু সে ধারণা পাল্টে গেছে আমার। এখন ভাবছি যত কষ্টই হোক লেখাপড়া করিয়েই ওদেরকে বড় দেখতে চাই।

ইরিন ও শারমিনের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা হাকিম কেজি অ্যান্ড জুনিয়র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, ‘ইরিনা ও শারমিন একসময় ব্র্যাক স্কুলে পড়লেও ওই স্কুলের শিক্ষকেরা তাদেরকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি। এজন্য খুব কান্নাকাটি করছিল শুনে আমি গিয়ে তাদেরকে আমার স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছি।

ভর্তির পর দেখলাম তাদের মেধা ভালো। ইশারাতেই প্রায় সব বোঝতে পারে। বলেও ইশারায়। কিছু না বোঝলে বোর্ডে লিখে দিলে তারা বোঝে নেয়। সকল শিক্ষক এখন তাদের বুঝতে পারেন। সেভাবেই পড়াচ্ছেন তারা। শিক্ষকদের নির্দেশনা বোঝতে পারে বলেই সফলতার সাথে পড়াশোনা করে পাস করে যাচ্ছে।

৫ম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ওরা ভালোভাবেই পাস করে গেছে। জেএসসি পরীক্ষায়ও তারা ভালো ফলাফল করবেন আশা প্রকাশ করে প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ‘ইরিন ও শারমিনের কথা জানতে পারার পর মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলম মনজু যতদিন তারা পড়াশোনা করবে তাদেরকে বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

আমি এবং স্কুলের শিক্ষকরা যতদিন এখানে আছে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাব।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *