দেশের প্রধান সবজি উৎপাদনের ভান্ডার হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ডে চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন রকম সবজির চাষ হয়েছে। তবে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার কৃষক পরিবার।
এ জেলার হাট-বাজার গুলোতে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রন নেই বললে চলে। ফলে খুচরা দোকানীরা ৪০ টাকার সবজি তার দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন বলে প্রায় সময় ক্রেতা ও হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষকরা ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করেন। অন্যদিকে সিন্ডিকেটের থাবায় কৃষকদের সদ্য চাষকরা শীতকালীন সবজির প্রকৃত মূল্য পাবে কি পাবেনা তাও অনেকটা অনিশ্চিত।
পৌরসভাস্থ মোহন্তের হাট বাজারে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকার তাদের পছন্দের শীতকালীন সবজি প্রতিটি শীত মৌসুমে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলী,ওয়ার্লেস ঝাউতলা বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান আগত পাইকার।
একটু ভাল দামের আশায় উপজেলার কৃষক পরিবার গুলো মৌসুম ছাড়াই আগাম বিভিন্ন রকম সবজির চাষ করে থাকেন। তবে পাইকারী বাজারে সবজির দাম কম থাকলেও খুচরা বাজারে কিন্তু অনেক বেশি। ফলে ক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছে মত দাম নিয়ে অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে বলে ক্ষোভ বাজারে আসা একাধীক সল্প আয়ের ক্রেতাদের।
এখানকার খুচরা দোকানীরা সবজিতে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০টাকা করে বেশি নিচ্ছেন। যা সাধারণ ক্রেতাদের অনেকটা হতাশ করে তুলছে।
অভিযোগে জানা যায়, পৌরসদর মহোন্তের হাট, বড়দারোগা হাট, বাড়বকুণ্ড, শুকলালহাট, কুমিরা, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাটসহ উপজেলার অনেক হাটে কৃষকদের অধিক উৎপাদিত সবজি যখন সাপ্তাহিক হাটে নিয়ে আসেন। তখন এক ধরনের পাইকার তাদের কাছ থেকে খুব কমদামে সবজি ক্রয় করে বাইরে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে সারা বছর সবজি চাষকরে যে লাভের কথা ভাবে কৃষক, তা আর হয়ে উঠেনা। এতে অধিক লাভবান হচ্ছেন পাইকার ও খুচরা দোকানি। মধ্যখানে শুধু লোকসান গুনতে থাকেন খেটে খাওয়া কৃষি পরিবারগুলো।
এদিকে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সাগরের বেড়িবাঁধ এলাকার পুরানো এক কৃষক মোঃ আলি ২৪ ঘন্টা যট নিউজকে জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমিতে ফসল উৎপাদন করেন তিনি। এবছর অন্তত ৫ একর জমিতে ছোট শশা ও শীতকালীন শিমের চাষ করেছেন। এতে তার শেষ পর্যন্ত খরচ পড়বে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। পরিস্থিতি ও বাজার দর ভাল থাকলে তিনি কমপক্ষে ৮ লক্ষ টাকারও বেশি সবজি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি আরো বলেন, একটি সিন্ডিকেট ৬০ টাকার সবজি ৪০ টাকা করে বলেন। কাচা মাল পঁচে যাওয়ার ভয়ে আমরা কৃষক কম দামে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেই। শুধুু তাই নয় ১০০ কেজি সবজি বিক্রি করলে ৮০ কেজির টাকা পাওয়া যায়। আর বাকি ২০ কেজি টাকা বিভিন্ন অযুহাতে বাদ দিয়ে দেন পাইকার সিন্ডিকেট।
উপজেলা বিভিন্ন হাট বাজারে পাইকারী দামে কৃষক টমেটো বিক্রি করছে কেজি ৭০ টাকা, আর খুচরা বাজারে ১২০ টাকা, বেগুন ৩৫ ও খুচরা বাজারে কেজি ৫০, ঢেঁড়শ ৪০ খুচরা বাজারে ৫০, চিচিংগা কেজি ৩০, খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্রনাথ ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, বর্তমানে সবজি বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছে কৃষক। চলতি বছর সাড়ে ৫হাজার হেক্টর জমিতে ১৯ হাজার কৃষক তাদের নিজ নিজ জমিতে শিমসহ বিভিন্ন রকম শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন। তার মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমিতে শিম ও আড়াই হাজার জমিতে অন্যান্য সবজির চাষ হয়েছে।
তিনি বলেন চলতি মৌসুমে সবজি শিম প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ মেট্রিকটন। আর অন্যান্য সবজি হেক্টরে ৩৫ মেট্রিকটন।
Leave a Reply