৫ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

চলমান বিধিনিষেধ ৫ মে (বুধবার) মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বুধবার (২৮ এপ্রিল) এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কয়েকটি শর্ত সংযুক্ত করে আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপের সময় বর্ধিত করা হলো।

১. স্থল, নৌ ও বিমানযোগে যেকোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের (পণ্য পরিবহন ব্যতীত) ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি বা অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রবেশকারীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

২. দোকানপাট ও শপিংমলগুলো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট বাজার বা সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৩. আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

৪. মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদসহ নন-কোভিড-১৯ সনদধারী যাত্রীরা নিজ বাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানাকে আগমন ও কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে অবহিত করতে হবে।

৫. উল্লেখিত দেশ থেকে আগত শুধুমাত্র নন-কোভিড-১৯ সনদধারীরা সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় থাকবেন। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে সম্মতি প্রদান করলে তারা স্ব স্ব বাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তবে সেক্ষেত্রে তাদের স্ব-স্ব থানাকে অবহিত করতে হবে।

৬. অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ ব্যয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় গত ২৫ এপ্রিল (রোববার) দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২৬ এপ্রিল (সোমবার) থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের জন্য দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকবে।

গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। এটা আমাদের দেশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। সেজন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, সার্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে অবস্থাটা আছে সেটি আরও এক সপ্তাহ কন্টিনিউ করা। না হলে এটা আরও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করতে পারে। সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেজন্য বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’

তিনি আরও বলেন, রাত ৮টা পর্যন্ত শপিংমল খোলা থাকবে। মানুষকে অবশ্যই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমলে যেতে হবে। তবে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

এছাড়া করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করাসহ ১২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথমবার ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এটি বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। যদিও শপিং মল খোলাসহ বেশকিছু বিষয়ে বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করেছে সরকার।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *