প্রতিকুল পরিবেশেও সাফল্যের শীর্ষে ব্র্যাকের তিনটি চা বাগান

ফটিকছড়ি প্রতিনিধিঃ করোনার লকডাউন, খরা-অনাবৃষ্টির প্রতিকুল পরিবেশেও ব্র্যাকের তিনটি চা বাগান ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২০ সালে চা শিল্পের সফলতার মধ্যে ব্র্যাকের চা বাগানের অবস্থান ছিলো প্রথম। এ সাফল্য ধরে রাখতে দরকার সরকার ঘোষিত ব্যাংক লোনের অর্থনৈতিক প্রনোদনা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৮৬৩ সালে প্রথম বানিজ্যিক চা বাগানের সুচনা হয় রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগানে। এটির আয়তন ২ হাজার ৪শত ৮৫.৪৬ একর। ১৮৬৪ সালে ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা বাগানের সূচনা হয় ৬ হাজার ৫ শত ৭২.৬৯ একর আয়তন নিয়ে। ১৯৬৪ সালের দিকে কৈয়াছড়া ডলু চা বাগানের যাত্রা শুরু হয় ১ হাজার ৭শত ২৫ একর জমি নিয়ে। ২০০৩ সালের পর এই তিনটি চা বাগানের মালিকানা আসে স্যার ফজলে হাসান আবেদের এনজিও প্রতিষ্টান ব্র্যাকের হাতে। তখন থেকে বাংলাদেশের চা শিল্পের উন্নয়নে এবং চা শ্রমিকদের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট চা উৎপাদন হয় ৮ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯০ হাজার কেজি। তার মধ্যে ব্র্যাকের তিনটি চা বাগানের মোট উৎপাদন ছিল ৩১ লক্ষ ৭২ হাজার ২শত ৫৯ কেজি।

ওই বছর সারাদেশে চা উৎপাদন ২০১৯ সালের তুলনায় ১০.০১% কম। সেখানে ব্র্যাকের পরিচালনাধীন বাগানে উৎপাদন কম ছিল মাত্র ১.৪৬% । ২০২০ সালে বাগান তিনটির উৎপাদিত চায়ের গড় বাজার মূল্য ছিল প্রতি কেজি ২২৯.১৬ টাকা আর বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের জাতীয় গড় বাজার মূল্য ছিল প্রতি কেজি ১৮৯.২৫ টাকা। ব্র্যাক’র চা এর জাতীয় বাজার মূল্যের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২১% বেশি ছিলো। ২০২০ সালে নিলাম বাজারে ব্র্যাকের তিনটি বাগানের উৎপাদিত চা বাজার মূল্যের টপ টুয়ান্টিতে ছিল। এর মধ্যে ব্র্যাক কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান প্রথম স্থান, ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান ষষ্ঠ স্থান এবং ব্র্যাক কোদালা চা বাগান ১৩তম স্থান অর্জন করে।

ব্র্যাক চা কোম্পানী সূত্র জানায়, ব্র্যাক কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান পরপর দুই বছর (২০১৯,২০২০) নিলাম বাজারে প্রথম স্থান অর্জন করে। চা উৎপাদনে ১ মিলিয়ন প্লাস বাগানের মধ্যে ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান বাজার মূল্যে ১ম স্থানে রয়েছে। কোম্পানী হিসাবে চায়ের বাজার মূল্যের অবস্থানের দিক থেকে ব্র্যাক ১ম স্থানে রয়েছে। ব্র্যাকের আওতাধীন তিনটি চা বাগানে প্রতি বছর ১৫০ একর এর উর্দ্ধে নতুন চা আবাদ সম্প্রসারন করা হয়।

চট্টগ্রাম চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নিরঞ্জন নাথ মন্টু জানান, ব্র্যাকের চা বাগানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা সুষ্ঠ ও সুচারু ভাবে সম্পাদনের জন্য নিজস্ব হাসপাতাল/ডিসপেনসারির ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য বাগানের অভ্যন্তরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি স্কুল রয়েছে। বাগানের মহিলা শ্রমিক ও শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে ও তাদের সার্বিক কল্যানে দুই জন মহিলা ওয়েলফার অফিসার রয়েছে। ব্র্যাকে চা বাগানের শ্রমিক ও শিশুদের জন্য ক্রেস হাউজ আছে এবং তাদেরকে প্রতিদিন পুষ্টি জাতীয় খাবার সরবরাহ করা হয়।

ব্র্যাক কর্ণফূলী চা বাগানের ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জলবায়ু মোকাবিলার ধারাবাহিকতায় চা বাগান গুলিতে প্রচুর পরিমানে ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ রোপন করেছে ব্র্যাক। কীটনাশক, বালাইনাশক এবং আগাছা দমনের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে যাতে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব না পড়ে। এদিক বিবেচনা করে পরিবেশ বান্ধব বালাইনাশক ও আগাছানাশক ঔষধ ব্যবহার করে আসছে। ব্র্যাকের তিনটি বাগানে প্রচুর পরিমানে আগর গাছ রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে প্রথম আগর গাছ রোপনের উপর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার-২০০৯ এ ভূষিত হয়েছে।

কর্ণফুলী চা বাগান সূত্র জানা গেছে, ২০২০-২০২১ সালে চা বাগানগুলো তীব্র খরার সম্মুখীন হচ্ছে। বাগান গুলিতে বৈদ্যুতিক সুবিধার আওতায় সেচ (আন্ডার গ্রাউন্ড ইরিগেশন) এর সুব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু বাগানগুলোতে বিদ্যমান জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ প্রদানের জন্য পানির তীব্র সংকট হচ্ছে। চা বাগানগুলো বিগত ২০ বছরের মধ্যে এরকম তীব্র খরার সম্মুখীন হয়নি। তাই বর্তমানে বাগান গুলোতে জলাশয় বৃদ্ধি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা অতীব জরুরী।

এ ব্যাপারে ব্র্যাক চা বাগানের ডিজিএম মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ চা বোর্ড এর মাধ্যমে নতুন জলাশয় ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন সহযোগীতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক বাগান মালিকদেরকে প্রনোদনা ঋণের ব্যবস্থা করা হলে ব্র্যাকের চা বাগানগুলো আরও উন্নতি সাধন করবে এবং বিগত বছরের তুলনায় আরো চা উৎপাদন করে দেশীয় চায়ের বাজারে ভাল অবস্থান সৃষ্টি করবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *