আজ থেকে দেওয়ানহাট-বারিক বিল্ডিং সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ

চট্টগ্রামের ব্যস্ততম দেওয়ানহাট-বারিক বিল্ডিং সড়কে রাস্তার উভয়পাশে রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। রিকশা চলাচল বন্ধে সিন্ধান্ত নিয়েছে নগর ট্রাফিক পুলিশ। যানজট নিরসনে ঢাকার পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই রিকশা চলাচল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজ ৬ নভেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মো. তারেক আহমেদ।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ককে পুরোপুরি রিক্সামুক্ত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে প্রাথমিকভাবে দেওয়ান হাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রিক্সা চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে। তবে চৌমুহনী মোড় এবং বাদামতলী মোড়ে পূর্ব পশ্চিমে রাস্তা ক্রস করতে পারবে রিক্সা। মোড়ের একশ’ গজের মধ্যে রিক্সাসহ কোন যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।

সড়কে শৃঙ্খলার স্বার্থে ট্রাফিক পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর রিকশা মালিক পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিক মিয়া।

পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, নগরীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রিক্সাকে দায়ী করা হয়। ধীরগতির এই বাহন রাস্তার যান্ত্রিক যানবাহনের গতি থমকে দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে রিক্সার জটলার কারণে ভয়াবহ যানজট হয় নিত্যদিন।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে রাস্তার পরিমাণ খুবই কম। একটি মানসম্পন্ন বিশ্বমানের শহরে কমপক্ষে বিশ শতাংশ রাস্তা থাকলেও চট্টগ্রামে এর পরিমান দশ শতাংশেরও কম। বেহাল এই অবস্থার মাঝে প্রধানতম যন্ত্রনা রিক্সা। এক লাখের মতো রিক্সা চলাচল করে নগরীতে। এর বাইরে হাজার হাজার অবৈধ রিক্সাও চলাচল করে। রিক্সার কোন নিয়ন্ত্রণ মোটর যান আইনে না থাকায় এগুলো নিয়ে পুলিশেরও তেমন কিছু করার থাকে না। কোন কোন রাস্তায় দুই তিন সারি করেও রিক্সা চলাচল করে। পেছনে প্রাইভেট গাড়ি হর্ণ দিলেও রিক্সা বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। তবে এতকিছুর পরও বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন জীবিকা এই বাহনের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় পুলিশ রিক্সা পুরোপুরি বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে পারছে না। মানুষ যাতে বেকার হয়ে না পড়েন সেদিকেও পুলিশকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

ব্যাংক পাড়া ও বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের অবস্থান ওই এলাকায় হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং সড়ক দিয়ে চলাচল করে।

এছাড়া বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা ও চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (সিইপিজেড) ও কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (কেইপিজেড) অবস্থিত কারখানার গাড়িগুলো ওই সড়ক ব্যবহার করে।

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক যানজটের কারণে প্রায় সময়ই স্থবির থাকে। বিশেষ করে দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং অংশে সড়কে প্রচন্ড যানজট লেগে থাকে। রিকশার কারণে এই যানজট সৃষ্টি হয় বলে দাবি ট্রাফিক বিভাগের।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. তারেক আহমেদ বলেন, ব্যস্ততম অংশ দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৬ নভেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। “এ বিষয়ে রিকশা মালিক সমিতি নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা উদ্যোগের পক্ষে আছে বলে জানিয়েছেন। আশা করছি এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে কোনো বাঁধা থাকবে না। পাশাপাশি যাত্রীদের এ সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য প্রচারণা চালানো হবে। এ ছাড়া নগরের রিকশা চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট পোশাক সংগ্রহের জন্য মালিক পরিষদকে বলা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পাইলট প্রকল্প হিসেবে ওই অংশে রিকশা চলাচল বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর যানজট কমলে নগরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে রিকশা বন্ধ করা হবে।”

রিকশা মালিক পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিক মিয়া বলেন, “ট্রাফিক বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর আমরা সেটি স্বাগত জানিয়েছি। তবে ওই এলাকায় সংযোগ সড়কগুলোতে রিকশা চলতে পারবে। শুধু মূল রাস্তায় রিকশা উঠতে পারবে না বলে ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশকে রিকশা মালিক পরিষদ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছি” তিনি আরও বলেন, “ট্রাফিক পুলিশকে চালকদের জন্য হলুদ রঙের পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছে। ১৫ দিনের মধ্যে এটি করতে বলেছে।”

উল্লেখ্য, চলতি বছর জুলাই মাসে ঢাকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *