পুলিশ পরিদর্শক সাইফের বিরুদ্ধে হুইপের মামলা, সাময়িক বহিস্কার

-ও-সামশু

২৪ ঘন্টা ডেস্ক : জাতীয় সংসদের হুইপের বিরুদ্ধে ১৮০ কোটি টাকা জুয়ার আয়ের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া সে আলোচিত পুলিশ পরিদর্শক সাইফ আমিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

আজ বিকেল ৪টা ২২ মিনিটে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে ও চট্টগ্রাম আবাহনীর পরিচালক এন করিম চৌধুরী শারুন তার ফেসবুক টাইমলাইনে সাইবার ক্রাইম আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

শারুন তার স্ট্যাটাসে লেখেন, মিথ্যা তথ্য প্রদান ও অসদাচরনের দায়ে পুলিশ পরিদর্শক বরখাস্ত। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে বেশিক্ষন ঢেকে রাখা যায়না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের ও সবাইকে আহবান জানান তরুণ এ রাজনীতিবীদ ও ক্রীড়া সংগঠক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, বুধবার সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

তিনি বলেন,চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্লাবটির উন্নয়নে যেখানে আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনই ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে স্ট্যাটাস দিয়ে তা ভুন্ডল করতে একটি শ্রেণী ষড়যন্ত্রে মেতেছে।

তিনি আরো বলেন, যেখানে কোন জুয়ায় চলে না সেখান থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের তথ্য তিনি পেলেন কোথায়? এতে তার মানহানি হয়েছে উল্লেখ করে এ ষড়যন্ত্রের প্রতিকার চেয়ে সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট-২) এর পক্ষে এআইজি (পিআইও-১) আনোয়ার হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ওই চিঠিতে বলা হয়, বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ, জনসম্মুখে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণœ করা তথা অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২(১) মোতাবেক এতদ্বারা চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।

সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি ডিআইজি, রংপুর রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ, রংপুরের কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন।

উল্লেখ্য,গত ২০ সেপ্টেম্বর পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিন তার ফেসবুক টাইমলাইনে স্ট্যাটাস দিয়ে হুইপের বিরুদ্ধে জুয়া থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ তুলেন। এছাড়া চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন পদে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তিনি নানাভাবে অর্থ আদায়ের বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন।

পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলেছিলেন
ক্লাব-জুয়া-সাংসদ এবং ওসি ঃ
‘‘ক্যসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ।

মহানগরের ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক দেহ ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লারগুলো ওসি সাহেবদের ২য় ইনকাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে। ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/ নাইট/ গল্ফ ডে নাইট।

এরপর ডিবি। ডিবি একসঙ্গে নেয় না, তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসেই স্ব স্ব ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউজগুলোতে পাঠানো হয়।

বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয় না।
মফস্বলের ওসিরা চায় সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লক্ষ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোস্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস।

ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলঙ্কৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন।
চট্টগ্রামে শামসুল হক মাস্টার (!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই।

আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ ৫ বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোর্ডের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং গডফাদার। দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত ( তথাকথিত যুবলীগ নেতা)।

টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ওই থানায় ১৩০০টি দেহ ব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসা প্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখানে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও রা করেন না।

এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরা কে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ ভাগ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিতো। এবং র্যাব এর এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ একযুগ পর চট্টগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

শত অভিযান আর আন্তরিকতা স্বত্তেও যা বন্ধ করতে পারেননি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মোহাঃ সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌঃ। অথচ হক মাস্টার ধোয়া তুলশী রয়ে গেলেন।

জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্থা। আগের সরকারে করেছেন খোকা, আব্বাস, ফালু, এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব। ’’

জানা যায়, পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিন এক সময় হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন।

২৪ ঘন্টা/রাজীব প্রিন্স

Comments

One response to “পুলিশ পরিদর্শক সাইফের বিরুদ্ধে হুইপের মামলা, সাময়িক বহিস্কার”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *