সিলেটে ট্রিপল মার্ডার, ঘাতক স্বামী হিফজুর গ্রেপ্তার

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই শিশুসহ তাদের মাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ওই নারীর স্বামী হিফজুর রহমানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হিফজুরের স্ত্রী নিহত আলিমা বেগম ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে আঘাতের কারণেই। হিফজুরের পরিবারে নিয়মিত কলহ ছিল, গত দুই মাসে দু’বার সালিশ হয়েছিল। গত শুক্রবার তার শ্যালিকার বিয়ে হওয়ার কথা। সেই বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও আলিমা বেগমের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরেই দুই শিশুসহ তাদের মাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানায় পুলিশ।

শনিবার (১৯ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন জানান- এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় হিফজুর রহমানকে (৩৫) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আর বাহিরের লোক ঘরের ভিতরে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমরা কোনো আলামত পাইনি। এ হত্যাকাণ্ডের আগের দিন দুপুরে হিফজুর তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কথিত পীর আতা মোল্লার কাছে গিয়েছিল গলা ব্যাথার সমস্যা নিয়ে। হিফজুরের প্রতি বছর মানসিক সমস্যা হতো, তখন সে কথিত পীরের কাছে গিয়ে ঝাড় ফু নিত। উদ্ধার করা বটি দা দিয়েই এলোপাতারি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিল না হিফজুরের।

এর আগে গত বুধবার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩০), তার দুই সন্তান মিজান (১০) ও তানিশা (৩)-এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘর থেকেই হিফুজরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকেই হিফজুরকে পুলিশের হেফাজতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

এঘটনায় আলিমা বেগমের বাবা আয়ুব আলী বাদী হয়ে গোয়ানঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলো সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এখন পুলিশের সন্দেহ আহত হিফজুরের দিকেই ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানান, চিকিৎসাধীন হিফজুর রহমান বর্তমানে সুস্থ আছেন। আজ রবিবার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেবেন। চিকিৎসকরা ছাড়পত্র দিলে এদিন আদালতে তোলা হবে। পাশপাশি মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করবে। হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই সন্দেহজনক আচরণ করছেন। তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর বুঝা যায় তার আঘাত গুরুতর নয়। বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সাথে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বটি দা দিয়েই খুন করতো না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন। আমাদের ধারণা স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলে দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী সন্তানদের মরদেহের হাত-পাও পরিষ্কার ছিলো। অথচ তার পায়ে বালি ও কাদা লাগানো ছিলো। এতে বুঝা যাচ্ছে সে রাতে ঘুমান নি। পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই হিফজুর স্ত্রী ও সন্তানদের কুপিয়ে খুন করেছেন বলে পুলিশের ধারণা। তাছাড়াও হিফজুর নিজে বলেছে তার স্ত্রীর পিছনে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।

এলাকার স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত হিফজুরের ঘরের কেউ ঘুম থেকে উঠছিলেন না দেখে প্রতিবেশীরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এসময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা। এসময় দরজার সিটকিনি খোলা দেখতে পান তারা। ভেতরে প্রবেশ করে তারা খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গোয়াইনঘাট থানায় খবর দিলে একদল পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করে ও হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠায়। হিফজুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপ রয়েছে। খবর পেয়েই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, হিফজুর তার মামার বাড়িতে ঘর বানিয়ে থাকেন। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী গ্রামে। আহত হিফজুর যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরটি তার মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত। আর পাশের আরও দুটি ঘরে তার মামারা থাকেন। হিফজুর দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

২৪ ঘণ্টা/বাপ্পা মৈত্র

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *