সিলেট প্রতিনিধি:
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালুর আগেই এক বিতর্কিত চিকিৎসককে আবাসিক চিকিৎসক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। নতুন ভবন যেখানে এখনো আউটডোর-ইনডোর স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়নি সেখানে কিভাবে আবাসিক চিকিৎসক দেওয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুনামগঞ্জ মেডিকেল এসোসিয়েশন।
তাছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্য সুবিধা বঞ্চিত মানুষজনও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন যেখানে সরকার সারাদেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদেরকে মানুষের সেবার জন্য হাসপাতালে পদায়ন করছে সেখানে সেবা চালুর আগেই দুর্নীতির মাধ্যমে দায়িত্ব ফাঁকি দিতেই এমন পদায়ন করা হয়েছে।
জানা যায়, সদ্য নির্মিত সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু না হওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তে সেখানে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালু রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কোন কার্যক্রম সেখানে নেই। কিন্তু হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে এক চিকিৎসক ডা. মোজাহারুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছে গত বুধবার। তিনি যোগদানও করেছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সুবিধভোগী একটি বিতর্কিত গোষ্ঠীকে নিয়ে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক মোজাহারুল ইসলাম একজন চিকিৎসক। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে কৈতক হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করায় তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে বিব্রত করছেন স্বাস্থ্য বিভাগকেও। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুইজন সংবাদকর্মী থানায় হুমকি ধমকির অভিযোগও করেছিলেন। কৈতক হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছিলেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি অনেক বিতর্কিত কাজের কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাকে বদলির সুপারিশ করে বলে জানা গেছে। এই বিষয় অবগত হয়ে তিনি দায়িত্ব ফাঁকি দিতে সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করে চালু হয়নি এমন একটি হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসকের তদবির করেন। অবশেষে সিভিল সার্জন ও সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তিনি চালু না হওয়া দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসক (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব নিয়ে বদলি হন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হাসনাত হোসাইন ও কামরুল ইসলাম শিপন সহ কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যক্তি তাকে স্বাস্থ্য বিভাগে তদবির করে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে নিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সুনামগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মী মানব তালুকদার বলেন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন কার্যক্রমই চালু হয়নি। এই অবস্থায় এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। কারণ জেলা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসক নেই। এখানে পদায়ন না করে মূলত জনগণকে সেবাবঞ্চিত করতেই চালু না হওয়া একটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জে সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন এক জায়গায় দায়িত্ব পালন কালে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে। তাই তাকে বদলি করা হয়েছে। যেখানে কোন কার্যক্রমই নেই সেখানে কিভাবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশি বুঝার দরকার নেই’।
সুনামগঞ্জ বিএমএ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, যেখানে কোন কার্যক্রমই নেই সেখানে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া ঠিক হয়নি। কারণ জেলা সদরসহ অনেক চালু হাসপাতাল চিকিৎসক সংকটে ভোগছে। তিনি বলেন, সরকার যেখানে মেডিকেল কলেজগুলো থেকে চিকিৎসক এনে হাসপাতালে পদায়ন করছে। সেখানে সিভিল সার্জন কেনো কার্যক্রম চালু নেই এমন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিলেন এটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।
হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর আগেই পদায়নের বিষয়ে স্বাস্থ্য সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, পদ থাকলেই পদায়ন করা যায়। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন প্রয়োজন মনে করেছে বিধায় পদায়ন করা হয়েছে।
২৪ঘণ্টা/বি এম
Leave a Reply