ইকবাল হোসেন :
চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হয় এই সিআরবি চত্বরকে। সবুজে ঘেরা সারি সারি সুবিশাল বৃক্ষ। কোনো গাছের বয়স একশ বছর। কোনোটির বয়স দুশোর বেশি। বয়সের ভারে এই বৃক্ষগুলো ন্যুব্জ হয়নি, বরং শতবছরেও গাছগুলো ধরে রেখেছে তাদের সবুজের সজীবতা।
দুই’শ বছরের ঐতিহ্যম-িত বৃক্ষরাজিবেষ্টিত সিআরবি এলাকার সবুজ সরিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরাও চাই,হাসপাতাল হোক তবে সিআরবি তে না।অন্য কোনো জায়গায় হাসপাতাল গড়ে উঠুক সেটাই পুরো চট্টগ্রাম বাসীর কামনা।চট্টগ্রামের কিছু মানুষ মীরজাফরের ভূমিকা পালন করছে,ঐসব মীরজাফর গুলো কে চট্টগ্রাম বাসী স্মরণী ও বরণীয় করে রাখবে। সিআরবি নিয়ে কখনো ব্যবসা করতে দেয়া হবে না।সিআরবির সাথে জড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। চট্টগ্রামের মানুষ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে হলেও মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সিআরবি কে রক্ষা করবে।
আজ এই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সবুজ বলয় শঙ্কিত সিআরবি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কিছু তস্কর হাসপাতাল বানাতে চাই এই সিআরবি চত্ত্বরে।চট্টগ্রামের মানুষ এতেই শঙ্কায় আছেন।যদি সিআরবিতে হাসপাতাল করবার অনুমতি পত্র দিয়ে দেন,রেলওয়ের কতৃপক্ষ,তাহলে,এখানকার শতবর্ষী গাছেরা যাবে কোথায়? এখানকার পাখি-পতঙ্গদের কে দেবে আশ্রয়? মানুষ বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার আর একটু সবুজের সান্নিধ্য পাবে কোথায়?হাসপাতাল অবশ্যই দরকার। এই করোনা মহামারিতে আমরা স্পষ্ট টের পাচ্ছি কত নিবিড়ভাবে আমাদের হাসপাতাল দরকার। কিন্তু, একটি হাসপাতাল নির্মাণ করতে গিয়ে এক ঐতিহাসিক পাবলিক সবুজ বলয়কে বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া কোনো সংবেদনশীল উন্নয়নবিধি নয়। কারণ,এই সবুজ বলয়ও মানুষসহ নানা প্রাণসত্ত্বাকে বিনামূল্যে অক্সিজেন যোগায়,বেঁচে থাকার সামাজিক-পরিবেশগত-মানসিক রসদ যোগায়।
শঙ্কা এ কারণেই যে, কোনো বৃহৎ অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণে আমরা দেখেছি বারবার কত নিদারুণভাবে বৃক্ষ, পাখি, পতঙ্গসহ বুনো প্রাণী নিশ্চিহ্ন করা হয়। নির্দয়ভাবে পাহাড়ি টিলা চুরমার করে সিলেট বা চট্টগ্রাম শহর গড়ে তোলা হয়েছে। এসব শহর আজ ঝলমলে প্লাস্টিক, প্রাণ নেই শিরায়।
সিলেটের বিশাল দীঘিগুলো দিন-দুপুরে হত্যা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এসব দীঘির পরিবেশগত অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। নাই হতে হতে চট্টগ্রাম শহরের ‘সিআরবির’ মতো একটি মাত্র পাবলিক সবুজ বলয়ের দিকে আজ তাক করেছে উন্নয়নের অমীমাংসিত তর্ক। তর্কটি কোনোভাবেই হাসপাতাল বনাম সিআরবি নয়। এটি হতেই পারে না।একটি হাসপাতালও সবুজ বলয় ছাড়া সম্ভব নয়, আবার একটি সবুজ বলয় সাজায় প্রাকৃতিক।তবে সিআরবির মতো এক ঐতিহাসিক সবুজ বলয়কে নিহত করে নয়, অন্য কোনো জায়গায়।আশা করছি, সিআরবিকে সুরক্ষিত রেখে জনদাবিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার।
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, বন্দরনগরীর সাংস্কৃতিক আয়োজনের অন্যতম কেন্দ্র ডিসি হিলে বেশ কয়েক বছর ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ।সিআরবির শিরীষতলায় বাঙালি সংস্কৃতির চিয়ায়ত অনুষঙ্গ পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসব আয়োজিত হয়। পাশাপাশি শিরীষতলায় অন্যান্য সাংস্কৃতিক আয়োজনও হয়ে থাকে।
সিআরবি এলাকায় বাণিজ্যিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ হলে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনও হুমকির মুখে পড়বে।
বর্তমানে নগরের একমাত্র উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ হিসেবে নিত্যদিন প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণের জন্য মানুষ সিআরবিতে আসে। এ ছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন এমনকি ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির সময়ে মানুষ সিআরবির পাহাড় ও বৃক্ষছায়ায় আসে প্রশান্তির খোঁজে।সিআরবি চট্টগ্রামে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে হাসপাতালের মতো স্থাপনা নির্মাণ কোনোভাবে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়।
চট্টগ্রামে ঐতিহ্য ও প্রকৃতি রক্ষায় সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
নগর বা জেলার অন্য কোনো স্থানে রেলওয়ের বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থার জমিতে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি সাধন না করে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের প্রতি আবেদন জানায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরাম পরিবার।
লেখকঃ-মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন
সভাপতি
রাঙ্গুনিয়া স্টুডেন্টস ফোরাম-চট্টগ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply