কোভ্যাক্সের আওতায় ও দ্বিপক্ষীয়ভাবে টিকা পাঠাতে কানাডার প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

কোভ্যাক্স কাঠামোর আওতায় ও দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশে করোনার টিকা পাঠানোর জন্য কানাডার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভ্যাক্স হিউম্যানিটেরিয়ান বাফারের কো-চেয়ার ও কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী কারিনা গাউল্ডের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় দুই মন্ত্রীর মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) অবস্থান থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. মোমেন দুই দেশের মধ্যে বিদ্যামান সুসম্পর্ক আরও গভীর ও জোরদার হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ও কানাডার যৌথ চেয়ারম্যানশিপে দোহায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ইউএন কনফারেন্স অন এলডিসিএস (এলডিসি-৫)-এর প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তিনি আশাপ্রকাশ করে মহামারি পরবর্তি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সেখানকার ব্যবসায় অগ্রাধিকার দিতে কানাডা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মোমেন আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) চলমান গণহত্যা মামলাসহ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রতি রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য কানাডাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে নেতৃত্ব গ্রহণ করতে এবং আইসিজে-তে মামলা পরিচালনার জন্য গাম্বিয়াকে আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য কানাডার প্রতি আহ্বান জানান।

মোমেন দাবি করেন, এ পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীও মারা যায়নি।

পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ভাসানচরে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তার জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি কক্সবাজার আশ্রয় শিবিরের চেয়ে ভাসানচরের অবস্থা অনেক ভালো বলে উল্লেখ করেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সিওপি২৬-এর শর্তে রাজি হতে কানাডার প্রতি আহ্বান জানান আবদুল মোমেন। এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশকে অবশ্যই তাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসিএস) বাস্তবায়ন করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ‘মুজিব সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’সহ বিভিন্ন অভিযোজন ও প্রশমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের চাহিদার ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করছে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক গ্লোবাল এডাপটেশন সেন্টার (জিএসি)-কে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনার জন্য কানাডার প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হত্যাকারী নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য আবারও জোরালো আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর মাধ্যমে ন্যায় ও আইনের শাসন নিশ্চিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় কানাডার মন্ত্রী কারিনা গাউন্ড বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় তিনি কানাডার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আবারও ধন্যবাদ জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুটি কানাডার পররাষ্ট্র নীতিতে রয়েছে উল্লেখ করে কারিনা আরও জানান, রোহিঙ্গা বিষয়ে আগামী তিন বছর মেয়াদী কর্মসূচির জন্য কানাডা ২৮৮ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দ রেখেছে। তিনি আরো বলেন, আইসিজে-তে রোহিঙ্গা মামলায় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সম্ভাব্যতা কানাডার বিবেচনাধীনে রয়েছে।

কানাডার মন্ত্রী আশ্বস্ত করে জানান, তারা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয়দের জন্য করোনার টিকা প্রদানের বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করবে।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *