‘মাহা’ সাইক্লোন এর কোনো প্রভাব না দেখা গেলেও, ব্যাট হাতে সাইক্লোন চালিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার ব্যাটে ভর করে আট উইকেটের জয় পেয়েছে ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ এ সমতা।
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের সূচনা করতে নামা মোহাম্মদ নাঈম এবং লিটন দাস দারুণ মোকাবেলা করছিলেন ভারতের বোলিং। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে খলিল আহমেদের বলে টানা তিন বাউন্ডারি হাঁকান নাঈম। অপর প্রান্ত থেকেও দারুণ ব্যাটিং করছিলেন লিটন।
পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আনা হয় যুযবেন্দ্র চাহালকে। ওভারের তৃতীয় বলে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন লিটন। স্টাম্পিংয়ের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রিশাভ পান্ট। বল স্টাম্প পার করার আগেই তিনি ধরে ফেললে দেওয়া হয় নো বল। ফ্রি হিট ও পরের বলে দুই বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। পাওয়ারপ্লে শেষে বিনা উইকেটে ৫৪ রান তুলে বাংলাদেশ। দুই ওপেনারের দারুণ ব্যাটিংয়ে বড় স্কোরের পথেই হাঁটছিল বাংলাদেশ।
ওয়াশিংটন সুন্দরের করা পরের ওভারে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জীবন পান লিটন। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি রোহিত। তবে পরের ওভারেই বিদায় নেন লিটন। টানা দুই জীবন পাওয়ার পর রান আউট হন তিনি। চাহালের দারুণ ডেলিভারি আঘাত হাতে তার প্যাডে। পান্টের আবেদনের সময় রানের জন্য দৌড় দেন তিনই। অথচ বল ছিল উইকেটের খানিক সামনে। পান্ট এসে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে রান আউট করেন লিটনকে। দুইবার জীবন পেয়ে লিটন করেন ২১ বলে ২৯। ভাঙে ৬০ রানের ওপেনিং জুটি।
শুরুটা ভালো করেছিলেন সৌম্য সরকার। এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম। একাদশতম ওভারে সুন্দরের বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে আসেন নাঈম। ৩১ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। সেখান থেকেই যেন পথ হারানোর শুরু।
ক্রুনাল পান্ডিয়ার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সৌম্য সরকার আভাস দিয়েছিলেন বড় ইনিংসের। কিন্তু পরের ওভারে জোড়া আঘাত আনেন চাহাল। ওলটপালট করে দেন সবকিছু। গত ম্যাচের নায়ক মুশফিকুর রহিম ৪ রান করে বিদায় নেন ডিপ মিডউইকেটে থাকা পান্ডিয়ার হাতে। শেষ বলে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি সৌম্য। আগের ভুল অল্পের জন্য করেননি পান্ট। স্টাম্পিং করতে সফল হন তিনি। ১০৩ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে যায় বাংলাদেশের।
এরপর আফিফ হোসেনকে নিয়ে ২৫ রান যোগ করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে রানের গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বড় স্কোরের সম্ভাবনা মিলিয়ে যায়। ইনিংসের ১৭ তম ওভারে খলিল আহমেদের বলে তুলে মারতে গিয়ে বিদায় নেন আফিফ হোসেন। ৮ বলে করেন ৬ রান। ঐ ওভারে তিন চার মেরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলকে ১৭০ রানের আশেপাশে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান। কিন্তু পরের দুই ওভারে চাহাল আর চাহার দেন মাত্র ৪ রান করে। ১৯ তম ওভারে চাহারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ডুবের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিয়ায় নেন রিয়াদ। ২১ বলে ৩০ রান করেন তিনি। শেষ ওভারে আমিনুল ইসলামের ব্যাট থেকে আসে একটি চার, রান হয় নয়। শেষ ৩ ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ভারত, রান হয় মাত্র ১৭।
বাংলাদেশ করে ৬ উইকেটে ১৫৩। রাজকোটের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে সেই লক্ষ্য খুব একটা কঠিন ছিল না ভারতের জন্য।
শুরু থেকেই বিধ্বংসী ছিলেন রোহিত শর্মা। অন্য প্রান্তে শিখর ধাওয়ান খেলছিলেন ঠান্ডা মাথায়। বাউন্ডারির ফোয়ারা ছিল রোহিতের ব্যাটে। বোলিং আক্রমণের তিন পেসারকেই রোহিতের সামনে মনে হয়েছে নখদন্তহীন। পাওয়ারপ্লে তে ভারতের করা ৬৩ রানের ৪৬ রানই ছিল রোহিতের ব্যাটে।
এরপর আমিনুলের ওপর চড়াও হন ধাওয়ান। এ দুই ওপেনারকে কোনোভাবেই আটকাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। আফিফের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতক পূরণ করেন রোহিত। সবচেয়ে বড় ঝড় যায় ইনিংসের দশম ওভার করতে আসা মোসাদ্দেক হোসেনের ওপর। তার প্রথম তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন রোহিত। প্রথম ১০ ওভারেই রান হয়ে যায় বিনা উইকেটে ১১৩। রোহিত-ধাওয়ানের ব্যাট থেকে আসে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে চতুর্থবারের মতো শতরানের জুটি।
১১৮ রানের মাথায় আমিনুলের বলে বোল্ড হন ধাওয়ান। ২৭ বলে ৩১ রান করেন তিনি। নিজের পরের ওভার এসে রোহিতের উইকেট নেন আমিনুল। ৮৫ রান করে বিদায় নেন রোহিত। তার ইনিংসে ছিল ৬ চার আর ৬ ছক্কা। এরপর বাকি কাজ সারেন শ্রেয়াস আইয়ার (২৪*) এবং লোকেশ রাহুল (৮*)। ২৬ বলহাতে রেখেই জিতে যায় ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১৫৩/৬, ২০ ওভার
নাঈম ৩৬, সৌম্য ৩০, রিয়াদ ৩০
চাহাল ২/২৮, চাহার ১/২৫, সুন্দর ১/২৫
ভারত ১৫৪/২, ১৫.৪ ওভার
রোহিত ৮৫, ধাওয়ান ৩১, আইয়ার ২৪*
আমিনুল ২/২৯
Leave a Reply