লামায় মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনীতে অজ্ঞান ছাত্রী : অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি

লামা প্রতিনিধি : বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যের হাতে এক গরীব অসহায় মাদ্রাসা ছাত্রী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ছাত্রীসহ তার মা একদিনের মধ্যে লামা ছেড়ে না গেলে প্রাণ নাশের হুমকিও দেন ওই শিক্ষক।

আক্রান্ত ছাত্রী সুমাইয়া জাহান তুষা কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের মেয়ে ও লামা ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্রী।

এ ঘটনায় ছাত্রীর মা সুমী আক্তার বাদী হয়ে মারধর ও প্রাণ নাশের হুমকির বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মো. তমিজ উদ্দিন।

শিক্ষকের এমন জ্ঞানহীন কর্মকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে শিক্ষক মো. তমিজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এটি আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র। শুধুমাত্র আমি তুষাকে তার আচরণগত কারণে দু একটি চড় তাপ্পড় মেরেছি। জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জাফর উল্ল্যাহ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অভিযোগে প্রকাশ, বেশ কয়েক বছর আগে সুমী আক্তারের স্বামী নুর মোহাম্মদ মারা যান। দিন মজুরের কাজ করে ছেলে মেয়েদের ভরণ পোষন ও লেখা পড়ার খরচ চালানো তার পক্ষে কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।বিধায় তিন বছর আগে মেয়ে সুমাইয়া জাহান তুষাকে লামা ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার শিক্ষক তমিজ উদ্দিনের বমুবিলছড়িস্থ বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে দেন।

শর্ত ছিল কাজের বিনিময়ে তুষাকে পড়ালেখা করাবেন, কোন টাকা পয়সা দিতে হবেনা। তিন বছর যাবত শিক্ষকের বাসায় কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে আসছিল তুষা। গত মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে শিক্ষক তমিজ উদ্দিন ছাত্রীর মা সুমী আক্তারকে ফোন করে বলেন, তুষাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাকে আর রাখবেন না।

গরীব বিধায়, কোন কথা না বলে তুষাকে শিক্ষকের বাসা থেকে নিয়ে যান এবং মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জাফর উল্লাহর বাড়ীতে অবস্থান করে অন্তত বার্ষিক পরীক্ষাটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন মা সুমী আক্তার।

কিন্তু আত্মীয়তার সুবাধে তমিজ উদ্দিন, তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়ে একই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে অধ্যক্ষের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে তুষাকে দেখা মাত্র কোন ধরণের কথা ছাড়াই ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়ে মিলে তুষাকে বেধম মারধর শুরু করেন। এরপর শিক্ষক তমিজ উদ্দিনও মারধর করলে তুষা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে অধ্যক্ষ জাফর উল্লাহর স্ত্রী ও মেয়েরা তুষাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করায়।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হয়ে এভাবে ছাত্রীকে মারধর করা খুবই অমানবিক হয়েছে। ওই শিক্ষকের কাছে কোন শিক্ষার্থীই নিরাপদ নয়।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ পেয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *