দুই সন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে জাপানি নারী

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্বামী ইমরানের কাছ থেকে দুই সন্তানকে ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) এমনই তথ্য জানিয়েছেন এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছেন জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপান (এএসজেআই) এর শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারী ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে।

পরবর্তীতে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্পপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চার দিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

শিশির মনির আরও জানান, ৩১ টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকুলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে নিজের মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ইমরান শ্রীলঙ্কা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন। এরিকো বাংলাদেশে কোভিড পরীক্ষা করান এবং এর ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু ইমরান কোভিডের ফলাফল অবিশ্বাস করে এরিকোর সঙ্গে সন্তানদের সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে ২৭ জুলাই মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় এরিকোকে তার মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয় এবং একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় এরিকো সন্তানদের জিম্মায় চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *