কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে ইভ্যালি, বেতন-ভাতা স্থগিত

রাসেল তার কর্মীদের বলেছেন, ‘টি-১০ ক্যাম্পেইন’ থেকে প্রাপ্ত তহবিল ছাড়া কোম্পানির কাছে আর কোনো অর্থ নেই

গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর ইভালি এখন তার কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করেছে। বেতন ভাতা দিতে না পারায় তাদের অন্যত্র চাকরি খুঁজতে বলেছে।

সোমবার (২৩ আগস্ট) একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ইভালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল তার কর্মীদের বলেছেন, “টি-১০ ক্যাম্পেইন” থেকে প্রাপ্ত তহবিল ছাড়া কোম্পানির কাছে আর কোনো অর্থ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তিনি কর্মীদের বলেছেন, “অক্টোবর-নভেম্বরের আগে কোনো বেতন আশা করবেন না।”

এ নির্দেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ইভ্যালির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা আরিফ আর হোসেন বলেন, “তারা শুধু কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে কিন্তু এটা জোরপূর্বক নয়। কেউ যদি চলে যেতে চায় তারা যেতে পারে। আমরা সময়মতো বেতন দিতে পারছি না।”

প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রাক্তন কর্মচারী বলেন, “মনে হচ্ছে আমরা চোরাচালান বা অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। আমাদের ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং এখন চাকরির বাজারে আমাদের সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কারণ প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে ইভ্যালির কাছ থেকে কিছু কিনেছে।”

কাস্টমার সার্ভিস শাখার বেশ কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলতে এবং তথ্য গোপন করতে বলা হয়েছিল।

আরেকজন সাবেক কর্মচারী বলেন, “আমাদের এমন কোনো তথ্য দেওয়া হতো না যা গ্রাহকদের জানতে সাহায্য করবে। আমাদেরকে শুধুমাত্র গ্রাহকদের কাছে ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি করতে বলা হয়েছিল যে, তারা তাদের ডেলিভারি বা অর্থ ফেরত পাবেন। এমনকি এটি আসলেই পাবে কিনা তা না জেনেও। এমনকি অনেককে দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে।”

কর্মচারীরা বলছেন, তারা অনলাইন এ প্ল্যাটফর্মের ভোক্তা এবং বিক্রেতাদের কাছ থেকে হয়রানি এবং হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।

অনেক কর্মচারীর মতে, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পদগুলোর বেশিরভাগই ইভালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমার পরিবারের সদস্যরা দখল করে আছেন। যাদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে অক্ষম ছিলেন এবং এ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান তাদের ছিল না।

তারপরেও কোম্পানি প্রাথমিকভাবে তাদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি কেবল ব্র্যান্ডিং এবং কর্মীদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রেই বিশাল ক্ষতি করেছে।

ইভ্যালির বিরেুদ্ধে আরও অভিযোগ করে তারা বলেন, বিলাসবহুল ভ্রমণ এবং উপহারের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেছিল তারা। কিন্তু এতে শেষ পর্যন্ত কোম্পানিকে এত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল যে এটি আর গ্রাহকদের অর্থ ফেরত কিংবা কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানানোর জন্য সিইও পর্যন্ত পৌঁছানো যায়নি বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ইভ্যালির অনেক সাবেক কর্মচারী ইতোমধ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ইভ্যালির কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকারের সময় চরম অসুবিধা এবং আক্রমণাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

সাবেক কর্মচারীরা যেসব অসুবিধাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন সে বিষয়ে ইভ্যালির বেশ কয়েকজন বিভাগীয় প্রধান তাদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৌখিক আশ্বাস দিয়ছিলেন।

ইভালির সামাজিক যোগাযোগ প্রধান মৃধা মো. সাইফুল ইসলাম লিঙ্কডইন পোস্টে লিখেছেন, “আপনি যদি আপনার কোম্পানির জন্য ভালো প্রশিক্ষিত এবং বিশেষজ্ঞ নির্বাহী অথবা ম্যানেজার খুঁজে থাকেন তাহলে আপনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার কিছু বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য লোক রয়েছে যাদের কথা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলা যেতে পারে।”

ইভ্যালির প্রধান কারিগরী কর্মকর্তা ওসমান গনি নাহিদ একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমরা একটি কোম্পানি হিসেবে সংগ্রাম করছি, কঠিন সময় পার করছি। যেহেতু আমরা সময়মতো বেতন দিতে পারিনি, দলের সদস্যরা তাদের পরিবার এবং আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য আর্থিকভাবে সংগ্রাম করছে, তাই কিছু সদস্যের পক্ষে আমাদের পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। ইঞ্জিনিয়ারিং দলের কিছু কর্মচারী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাওয়ার জন্য চাকরি খুঁজছেন। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ কিছু ভালো এবং অত্যন্ত দক্ষ কাউকে খুঁজে থাকে দয়া করে আমাকে জানান। আমি বিভিন্ন পদের জন্য কিছু ভালো এবং দক্ষ ব্যক্তিকে সুপারিশ করতে পারি। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে তারা সত্যিই ভালো। অগ্রিম ধন্যবাদ।”

এদিকে, ইভালিতে যমুনা গ্রুপের বিনিয়োগ এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। কারণ যমুনা গ্রুপ এখনও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের আর্থিক বিবৃতিগুলো নিরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে।

রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমার বিরুদ্ধে ইতোধ্যেই প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে।

এর আগে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তাদের মধ্যে যারা অর্থ ফেরত পাননি তাদেরকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) কাছে মামলা করতে বলেছিল।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ইভ্যালি দীর্ঘদিন কাজ করার অনুমতি দিলেও তার দায় পরিশোধ করতে পারবে কি-না সন্দেহ আছে। ধরুন ইভ্যালির দায় ৯০ টাকা এবং তাদের কাছে আছে ১০ টাকা। এখন তাদের বর্তমানে যা আছে তা দিয়েই কি এত বিশাল ব্যবধান কমানো সম্ভব?”

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *