বুলবুল মোকাবেলায় সন্দ্বীপে ব্যাপক প্রস্তুতি

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহবিপদ সংকেত এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) জরুরি প্রস্তুতিমূলক সভা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও সিপিবির কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সন্বোধী চাকমা বলেন,সন্দ্বীপে ১১০টি সাইক্লোন শেল্টার মানুষের অবস্থানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে, পাঁচ হাজার লোক শেল্টারে অবস্থান নিয়েছেন। এবং শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন উপকরণ স্টকসহ একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ও রাতে খাওয়ার পর বেশির ভাগ লোক শেল্টারে ফিরবেন বলে মনে করি।

দুর্যোগপূর্ণ আবহওয়ার কারণে সন্দ্বীপের সঙ্গে বাহিরের সকল প্রকার নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ৯৫টি ভলন্টিয়ার টিম, ইউনিয়নভিত্তিক স্কাউট দল, নয়টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজনকে সরিয়ে আনার জন্য ব্যাপক মাইকিং করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় ও ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনতে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকা সন্দ্বীপ উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রচারণা শুরু করেছে।

সিপিপি’র কর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন পৌর মেয়র জাফর উল্যাহ টিটু

শনিবার সকাল থেকে হরিশপুর ২নং ইউনিট সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক সহ সকল ইউনিট একযোগে প্রচার প্রচারনা শুরু করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারী স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। রাস্তা,বেড়িবাঁধে মানুষকে সচেতন করছে। এছাড়াও পরিত্যাক্ত সাইক্লোন সেল্টারকে অবস্থানের উপযোগী করা হয়েছে।

পৌর মেয়র জাফর উল্যা টিটু সিপিপি হরিশপুর ২নং ইউনিটের সাথে বৈঠক করে তাদেরকে সর্বসাধারণের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগীতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

পৌর-আওয়ামী সভাপতি মোক্তাদের মাওলা সেলিম, কমিশনার শাহাদাৎ বিল্লাহ খাঁন মহসিন ও ইউনিয়ন টিম লিডার মো. দুলাল জনগণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে প্রচারণা চালিয়েছেন।

সন্দ্বীপ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তাদের মাওলা সেলিম জানান পৌর এলাকায় সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক সহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সদস্যদের নিয়ে আমি সর্বোচ্চ প্রচারণা চালিয়েছি। যারা এখনো শেল্টারে ফেরেননি তাদের রাতে গিয়ে আমরা নিয়ে আসবো শেল্টারে।

২ নং ইউনিটের টিম লিডার কার্তিক চক্রবর্তী,বাদল রায় স্বাধীন,মিঠু মজুমদার,পলি রানী নাথ,অশ্রু বিশ্বাস,ঝিনুক বিশ্বাস,সীমা ভদ্র, সতি রানী ভদ্র, পাভেল রায়, প্রান্ত চক্রবর্তী ও শুভ দে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন।

বাদল রায় স্বাধীন জানান, সর্বোচ্চ প্রচারণা চালিয়ে আমরা মানুষকে সচেতন করেছি। আশা করি, সন্ধ্যার মধ্যে সবাই সেল্টারে আশ্রয় নেবে। আমাদের প্রচারণায় গর্ভবতী, প্রসূতি নারী ও প্রতিবন্ধী এবং বৃদ্ধদের সবার আগে শেল্টারে নেওয়ার আহবান করেছি। আমার সহযোগী সকল স্বেচ্ছাসেবক যেকোনো সময় প্রস্তুত রয়েছে। এবং ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বিপদ সীমা নিচে নামা পর্যন্ত সকলে সক্রিয় থাকবে সেটা প্রত্যাশা করছি।

সিপিপির পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, সন্দ্বীপের ১৫টি ইউনিয়নের ১৪৬ ইউনিটের ৭৩০ নারী ভলান্টিয়ার ১৪৬০ পুরুষ ভলান্টিয়ারসহ মোট ২১৯০ জন ভলান্টিয়ার দুর্যোগের প্রস্তুতি মুলক প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছে।

মগধারা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রচারণা চালাচ্ছেন

মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন তার ইউনিয়নের জনগণকে নিরাপদে সরে যেতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

এদিকে সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা দুর্যোগ আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে সন্দ্বীপবাসীর পাশে দাঁড়াতে নিজের সংসদীয় এলাকায় ফিরে এসে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সকল দপ্তরের অফিসারদের নিয়ে জরুরি সভায় অংশগ্রহণ করে দুর্যোগ মোকাবেলার সর্বশেষ আপডেট জেনে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *