প্রেমময় কবি রুমি

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি, যিনি সবার কাছেই রুমি নামে সুপরিচিত; একজন ফারসি কবি। ১২০৭ সালে জন্মগ্রহণ করা এই বিখ্যাত কবি মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি এবং মৌলভী রুমি নামেও পরিচিত। তিনি একজন কবি, দার্শনিক, ধর্মবেত্তা এবং আধ্যাত্মিক গুরু। তেরো শতকের একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন তিনি।

রুমির নাম নিলেই যে শব্দটি সবার প্রথমে মাথায় আসে তা হল ‘সুফিবাদ’। রুমি এবং সুফিবাদ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুফিবাদ কী?

সুফিবাদ একটি উদার, অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল ও সার্বজনীন প্রেমময় মতবাদ। ব্যক্তিজীবনকে কলুষমুক্ত, সব ধরনের লোভ, স্বার্থপরতার উপরে নিজের অবস্থান সংহত এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে সুশৃঙ্খল, সৌন্দর্যময় রাখার জন্য সুফিবাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

রুমি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। তিনি জীবনযাত্রায় প্রেমকে রেখেছেন সকল কিছুর উর্ধ্বে। তিনি স্রষ্টাকে প্রেমের মাধ্যমে পেতে চেয়েছেন।

‘স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর অজস্র পথ আছে। তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিলাম’।

তিনি আকাশকে ছুঁতে চেয়েছেন প্রেম দিয়ে এবং সে শিক্ষাই দিয়ে গেছেন আমাদেরকেও।

‘ আকাশকে কেবল হৃদয় দিয়েই ছোঁয়া যায়’।

প্রেমকে কোনো সীমানায় বেঁধে রাখেননি তিনি, বরং বুঝিয়েছেন প্রেমের কোনো সীমানা নেই, নেই কোনো সীমাবদ্ধতা।

‘যেখানে মন কেবল সীমানাই দেখতে পায়, প্রেম সেখানেও গোপন পথ খুঁজে বের করে’।

তিনি বিশ্বাস করতেন আমাদের সকলের ভিতরেই রয়েছে আলো। এ আলো দিয়েই আমরা সমগ্র পৃথিবীকে করতে পারব আলোকিত। এ আলো আসলে কী? এ আলো আমাদের প্রতিভা, এ আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রেম, যা দিয়ে আমরা পারব সমস্ত বিশ্বকে প্রেমময় করে তুলতে।

‘তোমার আলোই জগতকে আলোকিত করে’।

রুমির মতে, পৃথিবী বদলানোর পরিবর্তে আমাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন করা উচিত। আমরা যদি আত্মউন্নয়ন করি তবেই কেবল এ পৃথিবীর উন্নয়ন ও সম্ভব এবং এটাই হলো জ্ঞানী ব্যক্তির কাজ।

‘গতকাল আমি বুদ্ধিমান ছিলাম, তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই’।

তিনি ছিলেন নতুনত্বের পূজারী। তার মতে নতুন চিন্তাচেতনা এবং কাজের মাধ্যমেই নতুন পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

‘নতুন কিছু তৈরি করো, নতুন কিছু বলো, তাহলে পৃথিবীটাও হবে নতুন’।

তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলামের স্পর্শ হতে এ পৃথিবীর কেউই বিরত নয়। মুহাম্মদের আলো কাউকেই পরিত্যাগ করে না। তিনি প্রার্থনা করেন, মুহাম্মদের ছায়া যেন সবার উপরেই থাকে।

‘মুহাম্মদের আলো কোনো অগ্নিপূজারি বা ইহুদিকে পরিত্যাগ করে না। তার সৌভাগ্যের ছায়া যেন সবার উপর উজ্জ্বল হয়। তিনি সুপথে নিয়ে আসেন যারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল মরুভূমিতে’।

ইসলামি স্বর্ণযুগের বিখ্যাত কবি ছিলেন তিনি। যদিও তিনি মূলত ফারসি ভাষাতেই রচনা করেছিলেন তার কবিতাগুলো, কিন্তু সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় তার কবিতাগুলো। এমনকি রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি এবং সর্বাধিক বিক্রিত কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তার এ জনপ্রিয়তার পেছনে মূল কারণ কি? আমার মতে তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা এবং প্রেমময় জীবনচেতনাই তার জনপ্রিয়তার মূল কারণ। তাই ১২৭৩ সালে মারা যাওয়ার এত এত বছর পরেও শুধুমাত্র প্রেম দিয়ে তিনি বেঁধে রেখেছেন সারা বিশ্বের মানুষকে।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *