পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামস্থ আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় বের হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস র্যালী।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে জশনে জুলুস নগরীর ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া আলিয়া মাদরাসাসংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে বের হয়।
জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাকিস্তানের দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের সাজ্জাদানশিন পীর ও চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ’র (মজিআ)।
জুলুসের বিশেষ গাড়িতে আছেন শাহজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ ও আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামেদ শাহ (মজিআ), আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উপদেষ্টা, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক সুফি মিজানুর রহমান, আনজুমানের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন, এডিশনাল সেক্রেটারি মো. সামশুদ্দিন, জয়েন্ট সেক্রেটারি সিরাজুল হক প্রমুখ।
জামেয়া আহমদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে শুরু হওয়া জুলুসটি বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, প্যারেড কর্নার, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক, আন্দরকিল্লা, চেরাগি পাহাড়, প্রেসক্লাব, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, মুরাদপুর হয়ে জামেয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলিত হবে। এর মধ্যে কাজীর দেউড়ি মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চে হুজুর কেবলা বক্তব্য দেবেন ও দেশের শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করবেন। এরপর জুলুস মাদ্রাসা মাঠে ফিরবে। সেখানে আখেরি মোনাজাত হবে।
জুলুসে অংশ নিতে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র, সমবয়সী বন্ধুরা একই রঙের পাঞ্জাব, টুপি, পাগড়ি পরেছেন। বেশিরভাগ মানুষের হাতে মিলাদুন্নবীর জন্য নকশা করা বিশেষ পতাকা।
লাখো মানুষের এ জুলুসকে ঘিরে মুরাদপুর থেকে ষোলশহরের সড়কগুলোর পাশে বসেছে হাজারো অস্থায়ী দোকান। যেখানে পাজামা, পাঞ্জাবি, বই, রুমাল, খেলনা, খাবার, জুস ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে।
সুফি মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহর হাবিব পৃথিবীতে এসেছিলেন মানবজাতির কল্যাণের জন্য। ১৯৭৪ সালে এ জুলুসের নির্দেশনা দেন বাগে সিরিকোট আল্লামা তৈয়ব শাহ (র.)। যারা নবীকে ভালোবাসেন, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। ঈদে মিলাদুন্নবী আমাদের খুশির দিন।
তিনি বলেন, এ মিলাদুন্নবীর উসিলায় আল্লাহ আমাদের আসমানি গজব থেকে রক্ষা করবেন।
সেক্রেটারি জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার জুলুসে ৬০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে ইনশাআল্লাহ। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র, বিভিন্ন মহল্লা কমিটি, সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।
তিনি জুলুসকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থানসহ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।
জুলুসের নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের পাশাপাশি আড়াই হাজার আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স (এএসএফ) ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
উল্লেখ্য,১৯৭৪ সালে বলুয়ারদিঘিস্থ খানকাহ থেকে জুলুস শুরু হয়। পরের বছর থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দেন রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিকত আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত বলুয়ারদিঘি এলাকা থেকে জুলুস বের হয়ে আসছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় জুলুসের পরিধি বাড়তে থাকে। লোকসমাগম সংকুলান না হওয়ার ১৯৮৪ সাল থেকে স্থান পরিবর্তন করে ষোলশহর আলমগীর খানকা শরীফে আনা হয়। বর্তমানে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৮৬ সাল থেকে সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ জুলুসে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
Leave a Reply