২০ বছরে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিমান প্রয়োজন!

২০ বছরে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিমান প্রয়োজন!

আগামী ২০ বছরে অ্যাভিয়েশন খাতে ৪৩ হাজার ৬১০টি নতুন বিমানের প্রয়োজন পড়বে। যার বাজারমূল্য ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িং।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২৩ বা ২০২৪ সালের আগে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল স্বাভাবিক হবে না। জাতিসংঘের মতে, বিশ্বব্যাপী এই খাতের সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ৬৬৫ লাখ মানুষ।

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের এয়ারলাইন্স ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমান আর আনুষঙ্গিক পণ্যের অর্ডার বাড়ছে।

মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বলছে, আগামী ১ দশকে সারা বিশ্বের বিমানের বাজার হবে ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের। ২০২০ সালে যা ছিল সাড়ে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার আর ২০১৯ সালে ছিল সাড়ে ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে।

আগস্টে বোয়িংয়ের বিমানের অর্ডার কিছুটা বেড়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে আকাশপথে ভ্রমণ ব্যবস্থা। আগস্টে ৩০টি বিমানের অর্ডার বাতিল হলেও নতুন করে অর্ডার এসেছে ২৩টি বাণিজ্যিক বিমানের।

বাতিল হওয়া অর্ডারগুলোর মধ্যে ২৮টি বিমানই বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্সের। এই বিমানের জন্য দুর্ভাগ্য বোয়িংয়ের পিছু ছাড়ছে না।

২০১৮ সালেও ১ হাজার বিমানের অর্ডার পেয়েছিল বোয়িং। দুই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা আর প্রাণহানির পর ধ্বস নেমেছে বোয়িংয়ের সুনামে। বাণিজ্যিক বিমানগুলোর মধ্যে ৭৩৭ ম্যাক্সের উড্ডয়ন প্রায় ২ বছর বন্ধ ছিল।

এখন বোয়িং ৭৮৭ মডেলের বড় বিমানই বেশি তৈরি করছে। গত মাসে ২২টি বিমান সরবরাহ করেছে বোয়িং। উল্টোদিকে, বোয়িংয়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের এয়ারবাস সরবরাহ করেছে ৪০টি বিমান।

বোয়িং কর্তৃপক্ষ জানায়, ২ বছরের আয়ে ধস নেমেছে তাদের। ২০২৩ বা ২০২৪ সালের আগে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল সারা বিশ্বে স্বাভাবিক হবে না বলেও জানায় বোয়িং কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের আগস্টে ১৮ লাখ যাত্রী বিমানে ভ্রমণ করেছে, যেখানে ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭ লাখ। কিন্তু ২০১৯ সালের আগস্টে এ সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ। তবে সীমান্তে যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার চেয়ে দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে আকাশপথে যোগাযোগ।

এখনো অনেক দেশ আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আর বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে। আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাইতে সারা বিশ্বে অভ্যন্তরীণভাবে ভ্রমণ ৮৪ শতাংশ বাড়লেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বেড়েছে ২৬ শতাংশ।

মহামারির পরও বোয়িংয়ের ভাগ্য কিছুটা ফিরেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ পুরনো বিমানগুলো ব্যবহার থেকে সরে আসতে নতুন ১৯ হাজার বিমানের প্রয়োজন হবে তাদের। কারণ এ সময়টায় এশিয়াতে অনেক বাড়বে বিমানে ভ্রমণের চাহিদা।

এই বিমানগুলোর পরিচালনার জন্য আগামী ২০ বছরে সারা বিশ্বে বোয়িংয়ের ৬ লাখ ১২ হাজার বৈমানিকের প্রয়োজন পড়বে। ৬ লাখ ২৬ হাজার প্রকৌশলীর প্রয়োজন পড়বে।

আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা আইএটিএ বলছে, গত বছর বিমানে ভ্রমণ করা যাত্রীসংখ্যা ৬০ শতাংশ বা ১৮০ কোটি কমে গিয়েছিল। সারা বিশ্বের অ্যাভিয়েশন খাতের লোকসান হয়েছিল ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

জাতিসংঘ বলছে, অ্যাভিয়েশন খাত সারা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট অর্থনীতির সাড়ে ৩ শতাংশ নির্ভর করে এই খাতের ওপর। সারা বিশ্বে এই খাতের সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ৬৬৫ লাখ মানুষ।

মার্কিন এ বিমান সংস্থা বলছে, আগামী ২০ বছরে অ্যাভিয়েশন খাতে ৪৩ হাজার ৬১০টি নতুন বিমানের প্রয়োজন পড়বে। যার বাজারমূল্য ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে। মধ্যপ্রাচ্য আর এশিয়ার চাহিদা পূরণে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ্যাভিয়েশনের মার্কেট হবে চীন।

বিমানে ভ্রমণ কমায় সারা বিশ্বে এখনো অলস পড়ে আছে ৪ হাজার বিমান। আগামী ২০ বছরে আকাশপথে ভ্রমণের কারণে ২ শতাংশ বাড়বে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *