বাড়ির মলাট দরজা

বাড়ির মলাট দরজা

নতুন বাড়ি সাজানোর সময় অন্দরমহলের রং, সাজসজ্জা, মেঝে, আসবাব নিয়ে যত বেশি ভাবনাচিন্তা করা হয়, ততটা ভাবনা কিন্তু বাড়ির বাইরের বা ভেতরের দরজা নিয়ে করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ অনুষঙ্গ থাকে উপেক্ষিত। একটু ভেবে দেখা উচিত দরজাও অনেকটা বইয়ের মলাটের মতো। অন্দরমহলের সাজ কেমন, এর প্রথম আভাস পাওয়া যায় সদর দরজা থেকেই। এমনকি বাড়ির বাসিন্দাদের রুচি, পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগার পরিচায়কও দরজা।

শুধু বাড়ির সদর দরজা নয়, প্রতিটি ঘরের দরজাও কিন্তু আলাদা পরিচয় বহন করে। কারণ, প্রতিটি দরজা সেই ঘর সম্পর্কে স্বচ্ছ একটা ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করে। সুতরাং বলাই যায় বাড়ির পরিচয় তুলে ধরতে যার অবস্থান এত গুরুত্বপূর্ণ, তার ধরন ও রূপবিন্যাস নিয়ে একটু ভালোভাবেই ভাবা উচিত।

শুধু দরজার নকশা নিয়ে ভাবলেই চলবে না। কোন দরজার উপাদান কী হবে, তা নির্বাচন করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। এরপর চিন্তা করতে হবে কীভাবে তাকে করে তুলবেন নজরকাড়া। তবে দরজা তৈরির আগে বাড়ির আয়তন, ব্যবহারিক প্রয়োজন, বাজেট সবকিছু মাথায় রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাড়ি বা ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী দরজা। যেমন দুই রুমের ফ্ল্যাটে যদি কেউ বিরাট লোহার দরজা ব্যবহার করে, নিশ্চয় তা হবে বেমানান। এখানেই দিতে হবে রুচির এবং নান্দনিকতাবোধের পরিচয়। সেগুনকাঠের দরজা সব সময় বেশ শক্ত আর এতে কারুকাজও করা যায় অনায়াসে। উডকার্ভিংও করা যায়। আবার এখন বাজারে নানা ধরনের তৈরি দরজা পাওয়া যায়। সেখান থেকে সাধ এবং সাধ্য অনুযায়ী বেছে নেওয়া যেতে পারে দরজা।

অনেক সময় দরজার কাঠামোগত পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে যোগ করতে হতে পারে বাড়তি অনুষঙ্গ অথবা দরজার উপরিভাগে আনা যেতে পারে পরিবর্তন। এই যেমন কাঠের দরজার ওপরের দিকের কিছুটা অংশ গোল করে কেটে নিয়ে সেখানে গ্লাস বসানো যায়। আবার ইদানীং নানা রকম অ্যামোনিয়া এচিং দিয়ে নানা রকম ফ্লোরাল বা অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ডিজাইনও করা সম্ভব। আবার দরজায় থ্রি ডাইমেনশনাল এফেক্ট আনতে উড কার্ভিংয়ের প্যানেল যোগ করা যায়। বাড়ির ভেতরের দরজায় স্পেসের ইলিউশন ক্রিয়েট করতে লাগানো যেতে পারে বড়সড় আয়না।

আবার রঙের ব্যবহারেও দরজার বিশেষত্ব তুলে ধরা যায়। এই যেমন দরজায় গাঢ় রং দিয়ে আশপাশের দেয়ালে হালকা রং ব্যবহার করলে, দরজা বিশেষ হয়ে উঠবে। আবার দরজায় টেক্সচার্ড পেইন্টও করা যেতে পারে। এ ছাড়া শৈল্পিক প্রকাশ ঘটাতে দেয়ালে ঝোলানো যেতে পারে নানা রকমের মুখোশ এবং ছবি। কিংবা দরজার দুই পাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে ছোট ছোট গাছের টব রাখলে মনোরম পরিবেশ তৈরি হবে। বাহারি ফুটম্যাটও হতে পারে ভালো অনুষঙ্গ। এ ছাড়া দরজার বাইরে উইন্ড চাইম কিংবা ছোট্ট ঘণ্টাও দারুণ লাগবে। দরজার ওপরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে সেখানে সুন্দর পেইন্টিংও মানানসই। সদর দরজায় নান্দনিক নামফলকের ব্যবহারও একটি ভালো মাধ্যম।

এতেও বাড়ির চেহারাটা পুরো বদলে যায়। আধুনিক ফ্ল্যাটগুলোতে সদর দরজার বাইরে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা বা লন থাকে। সেখানে সুন্দর আলোর ব্যবস্থা করলে পুরো বাড়ির আবহ পরিবর্তন হয়ে যায়।

সদর দরজার পাশাপাশি বাড়ির অন্য দরজাগুলোতেও করা যায় নানা ধরনের নিরীক্ষা। যেমন বাড়ির ভেতরের সব দরজা একই রকম হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। ফ্রেঞ্চ ডোর, সুইং ডোর, স্লাইডিং ডোর ইত্যাদি বাহারি ধরনের দরজা ব্যবহার করা যায়। তবে তা হতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। স্লাইডিং ডোর হলে তাতে গ্লাস পেইন্টিং করানো যায়। যেমন জালি বা জাফরির কাজ করানো যায়। মূলত দরজা সাজানো নির্ভর করে নিজের রুচিবোধের ওপর।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *