শিশুদের প্যাম্পাসকে লাশের ছবি বলে গুজব ছড়ানো সাঈদ গ্রেফতার

২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম ডেস্ক : ছিল শিশুদের প্যাম্পাস। কিন্তু ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অসংখ্য নবজাতকের লাশ উল্লেখ করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিলো মোঃ সাঈদ হোসাইন কানন(২৭) নামে এক যুবক।

সাঈদ যে উদ্দেশ্যে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে লাইভ করেছিলো তার উদ্দেশ্য অনেকটা সফল। মুহুর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়ে যায়। বেশ আলোচিতও হয়েছে এ যুবক। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশাসন হয়েছে সমালোচিত। অবশেষে কোতোয়ালি পুলিশের জালে আটকা পড়েছে সেই আলোচিত ভাইরাল বয়।

গতকাল সোমবার রাত পৌণে ১১ টার সময় নগরীর পুরাতন রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন হোটেল এলিনার সামনে থেকে এ ভাইরাল বয়কে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাছাড়া তার এ কাজে সহযোগী অপর যুবকের তথ্য দিয়েছে গ্রেফতার সাঈদ।

গ্রেফতার মো সাঈদ হোসাইন কানন (২৭), কুমিল্লা জেলার লাকসাম কান্দিরপাড় ইউনিয়নের হামিরাবাগ পশ্চিম পাড়ার মো. কোরবান আলীর ছেলে। বর্তমানে সে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার বানিয়াটিলা ইব্রাহিম কমিশনারের বিল্ডিং এর ৩য় তলায় ব্যাচেলর বাসা নিয়ে থাকতেন এবং পলাতক আসামি মো. পারভেজ একই জেলার মনোহরগঞ্জ আমতলী ট্যুর হামিরাবাগ এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মহসীন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, সম্প্রতি নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বের পাহাড়ে অসংখ্য নবজাতকের লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে মর্মে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে মিথ্যা বিভ্রান্তিক তথ্য প্রচার করেছে যুবক মোঃ সাঈদ হোসাইন কানন(২৭)।

ওসি বলেন, ফেসবুকে কুৎসা রটানো, উস্কানি দেওয়া, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সাঈদসহ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোমবার রাতে এ ফেসবুক লাইভকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর সাঈদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মিথ্যা তথ্য পাচারের সাথে জড়িত তার অপর সহযোগী মো. পারভেজকেও গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে জানিয়ে গ্রেফতার সাঈদ ও পলাতক পারভেজের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান ওসি মহসীন।

কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার সময় বৃষ্টির পানিতে ফুলে ফুলে জেলি আকৃতি ধারণ করা কিছু প্যাম্পাসের ভিডিও ধারণ করেন পারভেজ এবং সাঈদ। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেগুলো অবৈধ বাচ্চার ভ্রুন উল্লেখ করে মিথ্যা বিভ্রান্তমূলক তথ্যসহ নিজেদের ফেসবুক লাইভে ছড়িয়ে দেন এ দুই যুবক।

মিথ্যা তথ্য সম্বলিত, উসকানিমূলক, আক্রমাত্বক পোস্টটি মুহুত্বেই ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৫ হাজার শেয়ারসহ বিষয়টি নিয়া ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি মিডিয়াতেও আলোচনা সমালোচনায় বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ঝড়। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে পোস্টটি।

প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, কোতোয়ালী থানা জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স এর দক্ষিণ পাশ্বের সহকারী ইমাম মোয়াজ্জিমদের জন্য তৈরিকৃত টিনসেড ঘরের দক্ষিণ পাশের জামিয়াতুল ফালাহ কমপ্লেক্স এর কম্পিউটার অপারেটর মো. ইলিয়াছ থাকতেন সেখানকার একটি বাসায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার বাচ্চার ব্যবহৃত প্যাম্পাসগুলো বাসার পেছনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে ফেলে আসছেন। প্যাম্পাসগুলো বৃষ্টির পানি পড়ে ফুলে জেলি আকৃতি ধারণ করে।

কিন্তু ঘটনার দিন বিকেলে এ দুই যুবক রেডিসন হোটেলের উত্তর পাশের মাঝখানে পাহাড়ের ভেতর ফ্লাইওভারের নিচের গেইট দিয়ে আসার সময় এ বিষয়টি দেখতে পান।

তখন তারা দুজনে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকের লাইভে এসে ফেসবুক ইউজারদের উদ্দ্যেশে বলেন, অনেকগুলো অবৈধ বাচ্চা, অবৈধ না বৈধ সেটা আমরা সঠিক জানতে পারতেছি না, নড়াচড়া করিয়া দেখায় যে সবগুলো অবৈধ বাচ্চার ছবি”। ভিডিও প্রকাশের পর বিভিন্ন শ্রেনী সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃনা বা বিদ্বেষ সৃষ্টিসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টসহ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি উপক্রম হয়।

এদিকে ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের নজরে আসলে ফেসবুক ব্যবহারকারী সাঈদের আইডি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর থেকে ফেসবুকে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অপরাধে দুই যুবককে খুঁজতে থাকে পুলিশ। কিন্তু ঘটনার প্রচার পাওয়ার পরপরই দুজন চট্টগ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে কিছুটা বেগ পেতে হয়। এমনকি তাদের দুজনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধসহ ফেইসবুক আইডিটি ডিএকটিভ করে দেয়।

তবে গতকাল রাত পৌণে ১১ টার সময় নগরীর পুরাতন রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন হোটেল এলিনার সামনে সাঈদকে ঘোরাফেরা করতে দেখে পুলিশের একটি টিম গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিডিও ধারণ এবং ধারা বর্ণনার বিষয়টি স্বীকার করে নেন। এবং তার অপর সহযোগী পারভেজ (২৫) জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *