ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, করোনার অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
লন্ডনের চল্লিশ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হচ্ছে ওমিক্রনকে। টিকার দুটি ডোজেও এই সংক্রমণ প্রতিরোধ অসম্ভব হওয়ায় বুস্টার ডোজ নিতে নাগরিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে প্রথম ওমিক্রন সংক্রমিত হয়েছে গেল ২৭ নভেম্বর। রোববার বরিস জনসন বলেন, জলোচ্ছ্বাসের মতো ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ঘটতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের চেয়ে ওমিক্রন বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, এটি টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিলেও খুব একটা মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয় না।
বিশ্বজুড়ে করোনার অতিসংক্রমণের জন্য দায়ী ডেল্টা চলতি বছরের শুরুতে প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়েছিল। গেল মাসে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া ওমিক্রনের ব্যাপক সংখ্যক রূপান্তর ঘটেছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এছাড়া সংক্রমণের গতি কমিয়ে আনতে দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণভাবেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩টি দেশে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রিটেনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এ সংক্রমণ।
এদিকে ভারতে শনাক্ত হওয়া ডেল্টার প্রকোপ দক্ষিণ আফ্রিকায় কম থাকলেও ব্রিটেনে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্বের শীর্ষ সংস্থাটির এক কারিগরি ব্রিফিংয়ে বলছে, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে ওমিক্রনে করোনার টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। আর যেখানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটবে, সেখানে সংক্রমণের দিক থেকে ডেল্টাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ওমিক্রনে উপসর্গহীন সংক্রমণ কিংবা মৃদু অসুস্থতা দেখা গেছে। কিন্তু এতে মারাত্মক অসুস্থতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে গেল ২৪ নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার রিপোর্ট করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
গেল সপ্তাহে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার-বায়োএনটেক বলছে, তাদের টিকার তিনটি ডোজ এখনো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো যেসব দেশের কাছে পর্যাপ্ত টিকার মজুদ আছে, তারা নাগরিকদের বুস্টার ডোজ নিতে উৎসাহিত করছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যে প্রথম ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহাউয়ি। তিনি বলেন, লন্ডনে এখন এক তৃতীয়াংশ মানুষই ওমিক্রন আক্রান্ত। শেষ পর্যন্ত লাখো মানুষকে হাসপাতালে যেতে হতে পারে।
করোনার দুই ডোজ টিকা ওমিক্রন ঠেকাতে যথেষ্ট নয় জানিয়ে মন্ত্রী সোমবার থেকে ৩০ বছর ও এর বেশি বয়সীদেরকে বুস্টার ডোজ নেওয়ার তাগাদা দিয়েছেন। বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যে রোববার ওমিক্রন শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৩৭ জনে। তবে শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এলএসএইচটিএম) এর বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আরও কড়াকড়ির পদক্ষেপ না নিলে দেশ ওমিক্রন সংক্রমণের বড় ঢেউয়ের মুখে পড়তে পারে।
এন-কে
Leave a Reply