বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ মিলল খাল পাড়ে

অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা, ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, আড়তদারদের কারসাজিতে পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সরগরম সংবাদমাধ্যম। এরই মধ্যে মিশর, তুরস্ক, মিয়ানমার, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমাদানির কথা জানিয়েছে সরকার।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানার পর থেকে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২০০-২৫০ টাকা। অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধির জন্য পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আড়তে বিপুল পেঁয়াজ সংগ্রহে রেখে বেশি দামে বিক্রির আশায় হয়েছে গুঁড়েবালি।

তবে পেঁয়াজের ‘অস্থির’ বাজার নিয়ে শুরু থেকেই ত্রেতাদের অভিযোগ, আড়তদারদের কারসাজির ফলেই অনিয়ন্ত্রিত পেঁয়াজের বাজার।

ক্রেতাদের এমন অভিযোগের সত্যতাও মিলল এবার। যেখানে সারা দেশ পেঁয়াজ সংকটে ভুগছে, সেখানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারের পাশের খালের পাড়ে মিলল প্রায় ১৫ টন পচা পেঁয়াজ। এরইমধ্যে যে ছবি ফেসবুকে ভাইরাল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের মসলা মার্কেট হিসেবে পরিচিত হামিদুল্লাহ মার্কেট, চাঁন মিয়া বাজার এবং মধ্যম চাক্তাই এলাকায় এসব পচা পেঁয়াজ ফেলে যায় আড়তদাররা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে খাতুনগঞ্জে সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় থেকে প্রায় ২০ টন পচা পেঁয়াজ সরিয়েছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।

স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা জানান, দাম আরও বাড়বে সে আশায় নিজেদের গুদামে মজুদ করে রাখায় পেঁয়াজে পচন ধরেছে। সে পচা পেঁয়াজ এখন আড়ত থেকে বের হচ্ছে প্রতিদিন।

এ নিয়ে ভোক্তারা বলছেন, অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের পাশেই চাক্তাই খাল। সেখানেই এসব পচা পেঁয়াজ ফেলে যায় আড়তদাররা।

এদিকে, ফেলে যাওয়া পচা পেঁয়াজের বস্তা থেকে নিম্ন আয়ের মানুষরা খাওয়ার উপযোগী পেঁয়াজ বেছে নিচ্ছেন।

ব্যবসায়ী আলতাফ মাহামুদ জানান, পেঁয়াজগুলো মিয়ানমার থেকে আমদানি করা। এসব পেঁয়াজ যখন খাতুনগঞ্জে ঢুকছিল, তখন কিছুটা পচা ছিল। আর আড়তে মজুদ করে রাখার ফলে একেবারে পচে গেছে। তবে তিনি পচা পেঁয়াজের আড়তদারের নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি।

চাক্তাই এলাকার চাল ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, পেঁয়াজ পচলে ব্যবসায়ীদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ যে পরিমাণ পেঁয়াজ পচবে তার ক্ষতি পোষাতে ভালো পেঁয়াজের দাম বাড়াতে থাকবে তারা। এখন প্রতিদিন পচা পেঁয়াজ আড়ত থেকে বের হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এসব আড়তদারকে খুঁজে বের করা।

আড়তে কারা পেঁয়াজ মজুত করে রেখেছে, এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এমনকি চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এহেসান উল্লাহ জাহেদীও পচা পেঁয়াজের বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ তো বেশি দিন মজুত করে রাখা যায় না। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের অনেক আড়তে পানি ঢুকেছে। তখন হয়তো আড়তে পানি ঢুকে পেঁয়াজগুলো নষ্ট হতে পারে।

ট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম জানান, ‘রাতে খাতুনগঞ্জের ময়লার ভাগাড়ে বস্তায় বস্তায় পচা পেঁয়াজ ফেলে যাচ্ছে খাতুনগঞ্জের শ্রমিকরা। কর্ণফুলী নদীর পাড়েও পচা পেঁয়াজ ফেলে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ টন ধারণক্ষমতার চারটি গাড়ি দিয়ে এসব বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে।’

এদিকে আজ শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *