সামরিক খেতাব হারালেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু, ব্যবহার করবেন না রাজকীয় উপাধি

ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের তৃতীয় সন্তান ও দ্বিতীয় পুত্র ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সামরিক খেতাব বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁর রাজকীয় উপাধি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলা আমলে নেওয়ার ঠিক পরেই এমন ঘোষণা দিল বাকিংহাম প্যালেস। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

বাকিংহাম প্যালেস সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ৬১ বছর বয়সি প্রিন্স অ্যান্ড্রু এখন থেকে আর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর রাজকীয় খেতাব ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’ ব্যবহার করবেন না। তবে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন।

প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আদালতে ভার্জিনিয়া জিউফ্রে নামের এক নারীর করা মামলার বিরুদ্ধে ‘আত্মপক্ষ সমর্থন অব্যাহত রাখবেন’ ডিউক অব ইয়র্ক ।

ভার্জিনিয়া জিউফ্রে বয়স এখন ৩৮। তিনি নিউইয়র্কে গত বছরের আগস্টে অঙ্গরাজ্যের শিশু ভুক্তভোগী আইনে একটি মামলা করেছিলেন। শৈশবে কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কিংবা নির্যাতনের ঘটনার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ওই আইনে মামলা করা যায়।

প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে মামলায় আদালতে দাখিল করা নথিতে জিউফ্রে অভিযোগ করেছেন, তিনি প্রয়াত ধনকুবের অর্থলগ্নিকারী এপস্টেইনের মাধ্যমে যৌন পাচার হয়ে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।

এ ছাড়া ভার্জিনিয়া আরও অভিযোগ করেছেন—তিনি প্রিন্স অ্যান্ড্রু ছাড়াও আরও একাধিক ক্ষমতাশালী পুরুষের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

মামলায় ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, এপস্টেইন তাঁকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের জন্য পাচার করেছিলেন। সে সময় ভার্জিনিয়ার বয়স ছিল ১৭ বছর।

ভার্জিনিয়ার অভিযোগ—ডিউক তাঁকে যুক্তরাজ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রে তিন দফায় যৌন নিপীড়ন করেছেন। এবং সেসব ঘটনার সময় ভার্জিনিয়া মার্কিন আইন অনুযায়ী নাবালিকা ছিলেন।

তবে, ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদের একটি সূত্র জোর দিয়ে দাবি করেছে—গত বুধবার মার্কিন বিচারকের রায়ে মামলাটি আমলে নেওয়া হয়েছে বটে, তবে তা ‘ভার্জিনিয়ার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে নয়।’

বাকিংহাম প্রাসাদ এক বিবৃতিতে বলেছে, রানির অনুমোদন ও অনুমতি নিয়ে ডিউক অব ইয়র্কের সামরিক সংশ্লিষ্টতা এবং রাজকীয় খেতাব প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ডিউক অব ইয়র্ক (এখন থেকে) রাজকীয় কোনো দায়িত্বে পালন করবেন না এবং তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ মামলায় লড়বেন।’

প্রাসাদ সূত্রটি আরও জানিয়েছে, রাজপরিবারের মধ্যে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।

রানি এলিজাবেথের বড় ছেলে প্রিন্স চার্লসের ছেলে হ্যারি এবং পুত্রবধূ মেগানের মতো প্রিন্স অ্যান্ড্রুরও ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস উপাধি বজায় থাকছে। তবে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে বা দাপ্তরিক পর্যায়ে তিনি ব্যবহার করবেন না।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সামরিক খেতাবগুলো রানির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই এবং এটি প্রাসাদের নিজস্ব বিষয়।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘রিপাবলিক’ নামের রাজতন্ত্রবিরোধী একটি গোষ্ঠী ১৫০ জনের বেশি রয়্যাল নেভি, আরএএফ ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য স্বাক্ষরিত এক চিঠি প্রকাশ করে, যেখানে রানিকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কাছ থেকে তাঁর আটটি ব্রিটিশ সামরিক খেতাব প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *