কথা রেখেছেন জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, ত্রিপুরা পল্লীর দুর্গম গ্রাম হচ্ছে শহর!

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : হাটহাজারী উপজেলার দুর্গম এলাকা মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সার্বিক জীবন মান উন্নয়নের জন্য অঙ্গীকার করেছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।

চলতি বছরের আগস্ট মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনের সহযোগীতায় প্রথমবারের মতো দুর্গম এ পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। তখন এলাকার সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন পাহাড়ি দুর্গম এলাকার সকল সমস্যা নিরসনে তিনি সার্বিক সহযোগীতা করে যাবেন।

তিনি কথা রেখেছেন। আজ মঙ্গলবার মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় বিদ্যালয়ের প্রায় ১৩০ জন শিশুদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন স্কুল ইউনিফর্ম, স্কুল ব্যাগ, খাতা, কলম, পানির বোতল, রেইনকোট, হ্যান্ডওয়াশ এবং বিভিন্ন ক্রীড়া উপকরণ (ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন)।

দুপুরে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি এসব সামগ্রী বিতরণ করেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ উদ্যোগ বাস্তবায়নে দৃঢ প্রতিজ্ঞ জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন। এ লক্ষ্যে ত্রিপুরা পল্লীর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জীবন মান উন্নয়নে এ এলাকায় দ্রুতই প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ, গৃহহীনদের জন্য দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনসহ নানান উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেছেন তিনি।

ত্রিপুরা পাড়ার জনসাধারণ প্রত্যন্ত এলাকায় থেকেও যাতে শহরের সকল সুবিধা ভোগ করতে পারে এজন্য মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিতীয় বারের মতো দুর্গম এলাকায় উপস্থিত হয়ে এলাকায় দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক।

আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারে বলেছিলেন গ্রাম হবে শহর। তাই প্রত্যেক গ্রামকে শহরের আদলে সাজাতে সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করছেন। সরকারের উন্নত দেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়ন করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।

সরকারের এ চ্যালেন্সকে সামনে রেখে ফরহাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়ার অবহেলিত ত্রিপুরা পল্লীর জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। যে ত্রিপুরা পল্লীতে কোন স্বাস্থ্য, শিক্ষা,স্যানিটেশন,যোগাযোগ, বিনোদন, বিদ্যুৎ,ধর্মীয় উপাসনালয় ছিল না। বর্তমানে এ পল্লীবাসী এসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। এসব সমস্যার বেশীর ভাগই সমাধান হয়েছে। বাকী সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য প্রশাসন কাজ করছে।

শুস্ক মৌসুমে ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এইচবিবি সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। অবহেলিত এ পল্লীর অধিবাসীদের দূর্যোগ সহনীয় বাসস্থান নির্মাণের উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির এ পল্লীকে মডেল হিসাব গড়ে তুলে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে গ্রামকে শহরের পরিণত করার অঙ্গিকার বাস্তবায়ন করা হবে।

ত্রিপুরা পল্লী চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, হাটহাজারী প্রেসক্লাবের সভাপতি কেশব কুমার বড়ুয়া, ১নং ফরহাদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো, ইদ্রিস মিয়া তালুকদার।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম এমরান ও ত্রিপুরা পল্লীর অধিবাসীদের পক্ষে সচিন ত্রিপুরা। পরে অতিথিবৃন্দ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ, স্কুল ড্রেস, ক্রীড়া সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম বিতরণ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না। স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে আন্তরিক ভাবে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার তানভীর ফরহাদ শামীম, ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আলী আকবরসহ ইউপি সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *