সম্রাটসহ চার জনের লকার-ভল্ট স্থগিতের নির্দেশ

.jpg

মাদক-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানে আটক ও অভিযুক্ত যুবলীগের চার প্রভাবশালী নেতা ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৩ প্রতিষ্ঠানের অর্থ বা সম্পদ কোনো ব্যাংকের লকার বা ভল্টে থাকলে তাতে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের অ্যাকাউন্টগুলো স্থগিত করতে বলা হয়েছে।

যুবলীগের আলোচিত ওই চার নেতা হলেন- যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা টেন্ডার কিং জি কে শামীম এবং যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তাদের প্রতিষ্ঠানের অর্থ বা সম্পদ ব্যাংকের লকার, ভল্টসহ যেখানে যে অবস্থায় আছে সেভাবেই স্থগিত রাখতে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়া তাদের এফডিআর, ক্রেডিট কার্ড ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা অর্থও জব্দ করতে বলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোতে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় সিআইসি।

এতে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১১৬-এ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এদের কারও যদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকে তাও স্থগিত থাকবে। এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে সিআইসির পাঠানো চিঠিতে দেখা যায়, সম্রাটের প্রতিষ্ঠান তিনটি। এগুলো হচ্ছে- মেসার্স শারমিন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হিজ মুভিজ ও প্রিন্সিপাল রিয়েল এস্টেট।

জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান দুটি হল- মেসার্স জি কে বিল্ডার্স ও জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। খালেদের প্রতিষ্ঠান হল মেসার্স অর্পণ প্রপার্টিজ।

নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো হচ্ছে- মেসার্স নাওয়াল কনস্ট্রাকশন, মেসার্স আয়েশা ট্রেডার্স, মেসার্স নাওয়াল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিদ্যানিকেতন প্রি-ক্যাডেট স্কুল, নাওয়াল কনস্ট্রাকশন, মেসার্স ফারজানা বুটিক, মেসার্স ইনটিশার ফিশারিজ ও মেসার্স ডিজিটাল টেক।

সিআইসির চিঠিতে বলা হয়, এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত যে কোনো মেয়াদি আমানত (এফডিআর এসটিডি), মেয়াদি সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট স্থগিত করতে হবে।

এছাড়া এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংকের লকার বা ভল্টে রাখা যে কোনো সম্পদ, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ স্থগিত করার পাশাপাশি অন্য যে কোনো ধরনের সেভিং ইনস্ট্রুমেন্ট বা ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট থাকলে তাও স্থগিত করতে হবে।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর এসব ব্যক্তির সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পরদিন সাত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ দেয় সিআইসি।

শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ২০ সেপ্টেম্বর সাত দেহরক্ষী নিয়ে জি কে শামীমসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। অবৈধ ক্যাসিনোসহ নামে-বেনামে নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এরা। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করে র‌্যাব। ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার নামে একাধিক ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় সব টেন্ডারে ভাগ বসানোর অভিযোগ রয়েছে।

শুদ্ধি অভিযানে খালেদ ও শামীম গ্রেফতা হলে গা-ঢাকা দেন ক্যাসিনোর হর্তাকর্তা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। নুরুন্নবী শাওনও আড়ালে চলে যান। আর দেশত্যাগ করেন সম্রাটের আরেক সহচর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *