রামু ট্র্যাজেডির ৮ বছর : আটক সবাই জামিনে,বৌদ্ধরা শঙ্কিত

-ট্যাজেডি

আজ সেই ভয়াল ২৯ সেপ্টেম্বর। ২০১২ সালের এ দিনে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়।

২০১২ সালের এই দিনে সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থীরা ঝলসে দিয়েছিল কক্সবাজারের রামু উখিয়ার বৌদ্ধ বিহার ও পল্লী। বিভীষিকাময় সেই রাতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে প্রাণে বাঁচতে দিগবিদিক ছোটাছুটি করেছিলেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজারো অসহায় নারী-পুরুষ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে এ দিনে কক্সবাজারের রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর এবং পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে ৭টি বৌদ্ধ বিহার ও ১১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। লুট হয় প্রাচীন ও দূর্লভ অনেক বৌদ্ধ মূর্তি। এর পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর একই ধরনের হামলা সংঘটিত হয় উখিয়ার বিহারে।

সে ট্র্যাজেডিরই আজ ৮ বছর পূর্ণ হলো। সেদিনের এ নারকীয় ঘটনাটির জন্য আজও বাংলাদেশের মাটিকে কলঙ্ক বহন করতে হচ্ছে। ঘটনার ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও ধরা পরেনি মূল অপরাধীরা। এতে শঙ্কায় আছেন বৌধ সম্প্রদায়ের মানুষ।

তবে খুব কম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও পুড়ে যাওয়া মন্দির, বিহার এবং বসতবাড়ী আধুনিক নকশা ও শৈলীতে দৃষ্টিনন্দন করে সংস্কার আর পুননির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এক বছর পার না হতেই দিগন্ত মাথা তুুলে দাঁড়িয়েছে নবনির্মিত বৌদ্ধ মন্দিরগুলো। এই নির্মাণ শৈলী বৌদ্ধদের হৃদয় মন্দিরে দিয়েছে দোলা। ভূলিয়ে দিয়েছে অতীতের সকল যাতনা।

জানা যায়, এই দুই দিনে রামু ও উখিয়ার ১৯টি বৌদ্ধ বিহার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা করেন। ঘটনার পর ৯৯৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচারাধীন ১৮টি মামলায় সাক্ষী না পাওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। এ নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছুটা হতাশা আর আতঙ্ক রয়েছে।

উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলোর বিচার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। দেশে-বিদেশে আলোচিত এই ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের একজনও বর্তমানে জেল হাজতে নেই। সবাই এখন জামিনে আছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।

এতে মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী বৌদ্ধ সম্প্রদায়। আতঙ্কে রয়েছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। এ সম্প্রদায়ের নেতা অলক বড়ুয়া বলেন, ‘সমস্যা না হলেও আমরা একটু শঙ্কিত। কারণ মূল আসামি যারা তারা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে। সেজন্য আমরা শঙ্কিত।

এদিকে রামুর ঘটনার ৮ বছর উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ভোর ৫ টায় বুদ্ধপূজা, সকাল ৭ টায় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ৯টায় অষ্ট পরিষ্কার দান, দুপুরে অতিথি ভোজন, দুপুর ২ টায় শান্তি শোভাযাত্রা, সাড়ে ৩ টায় স্মরণসভা, সন্ধ্যা ৬ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। বৌদ্ধ মন্দিরে দেয়া আগুন নিভে গেছে। তবে সম্প্রদায়ের মনে যে ব্যাথার দাগ পড়েছে তা মুছবে কি কখনও।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *