গোলাপি টেস্টে প্রথম দিনেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

ইডেনের গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিন আপাতত বাংলাদেশের জন্য নীল। বেদনার রং। কষ্টের কষাঘাত! ৩০.৩ ওভারে ১০৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলের কাছে গোলাপি নিয়ে বাকবাকুম করার উপায় কি আছে? আর তাই উৎসবের মেজাজ নিয়ে শুরু হওয়া ইডেনের পিঙ্ক টেস্টের আমেজ এখন বাংলাদেশ দলের কাছে শিরিষ কাগজে ঘষা খাওয়া চেহারা!

ইডেনের উইকেট এবং গোলাপি বলে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের শত ছিদ্র বেরিয়ে গেল; সেই একই উইকেটে ভারত দিন শেষ করল ৩ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে।

প্রথম দিনেই ভারত এগিয়ে আছে ৬৮ রানে। বড় কোনো বিস্ময়কর ঘটনা না ঘটলে নিশ্চিতভাবে দ্বিতীয় দিন ভারত যেখানে পৌঁছাবে সেখান থেকে সামনে তখন একটাই দৃশ্য-ভারতের জয়, সম্ভাব্য বড় জয়!

এই টেস্টের শুরুটা বাংলাদেশের এতই বিশ্রী হয়েছে যে প্রথম দিন শেষেই হিসেব মেলানো শুরু হয়ে গেছে ভারত কতো বড় ব্যবধানে জিতছে! অনেক আশা নিয়ে যারা পিঙ্ক টেস্টের চতুর্থ দিনের টিকেট কেটে রেখেছেন; তারা এখন সেদিনের জন্য নতুন পরিকল্পনা করতেই পারেন।

প্রথম দফায় ব্যাটিংয়ে চুরমার বাংলাদেশ ইডেনে দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক বড় কিছু করে ফেলবে-এমন আশার বেলুনে ফুঁ দেওয়ার লোক কম। পিঙ্ক টেস্ট দেখতে গেছেন যারা, খুব সম্ভবত ম্যাচের দ্বিতীয় দিন ভারতের ব্যাটিং দেখার চেয়ে নিউ মার্কেটে শপিংয়ে কাটানোর মধ্যেই বেশি সুখ খুঁজে পাবেন তারা! এমন একতরফা ক্রিকেটে আনন্দ কোথায় ভাই?

টসে জিতে মুমিনুল হক ইন্দোরের মতো ইডেনেও ব্যাটিংয়ের সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু তার পুরো দল যে ব্যাটিং করল সেখানে সাহস, সামর্থ্য বা স্কিলের ছিঁটেফোঁটাও যে মিলল না!

৩৮ রানে শুরুর ৫ উইকেট হারানোর পরই এই ম্যাচের চিত্র পরিষ্কার। লাঞ্চে গেল বাংলাদেশ ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে। হেলমেটে চোট নিয়ে লিটন দাসের পিঙ্ক টেস্ট শেষ প্রথম সেশনেই। শুরুর ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে পাঁচজনের সঞ্চয় ১০ রান। তিনে মুমিনুল, চারে মোহাম্মদ মিঠুন এবং পাঁচে মুশফিকুর রহিম-মিডলঅর্ডারের এই তিন ‘ম’ শূন্য রানে আউট!

ইমরুল কায়েস সিরিজের টানা তৃতীয় ইনিংসে ব্যর্থ। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম ৫২ বল খেলেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ২৯ রানে। লোয়ার অর্ডারে যে দুজন ব্যাটসম্যান কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন সেই দুজনেই আর এই ম্যাচের অংশ নন। লিটন দাস ২৯ বলে ২৪ এবং নাঈম হাসান ২৮ বলে ১৯ রান করে বাউন্সারের চোট নিয়ে ফিরেন। সেই চোটেই তাদের পিঙ্ক টেস্টের রোমাঞ্চ শেষ।

গুরুতর আঘাত পাওয়া কোনো ক্রিকেটারের বদলি হিসেবে নতুন খেলোয়াড় নামানোর যে নতুন নিয়ম আছে তার জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ দল। ম্যাচ রেফারি সেই আবেদন পর্যালোচনা করে ব্যাটসম্যান লিটন দাসের জায়গায় মেহেদি মিরাজ এবং বোলার সাঈফ হাসানের বদলি হিসেবে তাইজুলকে খেলার অনুমতি দেন। তবে লিটন যেহেতু ম্যাচে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন তাই তার বদলি মিরাজও এই ম্যাচে শুধু ব্যাটিং করতে পারবেন। বোলিং নয়। অবশ্য তাইজুল বোলিং ও ব্যাটিং দুটোই করতে পারবেন। বদলি খেলোয়াড়ের এই নিয়মে কোনো দল যাতে বাড়তি সুবিধা না পায় সেজন্যই ম্যাচ রেফারি এমনসব কিছু নিয়ম-কানুন জারি করেন। ম্যাচ রেফারিকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে আইসিসি।

আর ইডেনে রান ক্ষমতা ভালো দেখাচ্ছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ইন্দোরে শূন্য রানে আউট হওয়া কোহলি ইডেনে দলের হয়ে প্রথমদিন শেষে সর্বোচ্চ স্কোরার। প্রথম দিন হাফসেঞ্চুরির আনন্দে ব্যাট তুললেন। দ্বিতীয় দিন অপেক্ষায় থাকছেন নিজের ২৭ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য। প্রথম দিন শেষে ভারতের ৩ উইকেটে ১৭৪ রানের মধ্যে চেতেশ্বর পূজারার হাফসেঞ্চুরিও রয়েছে।

হ্যাঁ, টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের ঘটনা থাকবে না-তা কি করে হয়! ১২ রানে রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ হাতে নিয়েও ফেলে দেন আল-আমিন। বেচারা বোলার ছিলেন আবু জায়েদ রাহী। তবে ভাগ্য ভালো রোহিত সেই সুযোগ বেশি কাজে লাগাতে পারেননি। এবাদত হোসেন তার প্রথম ওভারেই রোহিতকে ফেরান ২১ রানে।

ব্যাটিং দুঃস্বপ্নে কাটা বাংলাদেশের প্রথম দিনের বোলিংয়ে যা একটু সুখ পেলেন ঐ এবাদতই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১০৬/১০ (৩০.৩ ওভারে, সাদমান ২৯, ইমরুল ৪, মুমিনুল ০, মিঠুন ০, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৬, লিটন দাস ২৪ রিটায়ার্ড হার্ট, নাঈম হাসান ১৯, এবাদত ১, মেহেদি ৮, আল আমিন ১, আবু জায়েদ ০, অতিরিক্ত ১৪; ইশান্ত ৫/২২, উমেশ ৩/২৯ ও শামি ২/৫)।

ভারত প্রথম ইনিংস: ১৭৪/৩ (৪৬ ওভারে, আগারওয়াল ১৪, রোহিত ২১, চেতেশ্বর ৫৫, কোহলি ৫৯*, রাহানে ২৩*, এবাদত ২/৬১ ও আল আমিন ১/৪৯)।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *