নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজ বাহিনীর প্রধান রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ ও তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে র্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি র্যাবের।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার বাকি সহযোগীরা হলেন—মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা (২৩), মারুফ হোসেন মুন্না (২৩), মো. সেলিম (২৩), মাহবুব মিয়া (২৩)।
অভিযানে তিনটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, ৫টি ধারালো দেশীয় অস্ত্র, একটি মোটরসাইকেল ও ৬০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
জানা গেছে, হত্যাসহ ১৫টি মামলার আসামি শুটার রিয়াজ। একই সঙ্গে তিনি একজন পেশাদার কিলার। তিনি নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র ব্যবসা করে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য শুটার রিয়াজ একটি বাহিনীও গড়ে তোলেন।
আধিপত্য ও শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ এই এলাকায় মাদকের কারবার পরিচালনা করতেন রিয়াজ। কম বয়সীদের অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সন্ত্রাসী কাজের জন্য দলে যুক্ত করতেন তিনি।
সম্প্রতি গত ২৯ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়। হামলায় আরও ২০ জন আহত হয়। সেসময়ে এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
এর আগে, ১৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব-শত্রুতার জেরে শফিক ও শামীম মল্লিক নামে দুই ব্যক্তিকে তাদের বাসার সামনে অতর্কিতভাবে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব-শত্রুতার জেরে বিদ্যুৎ-এর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিও করেছিলেন ওই শুটার রিয়াজ। গুলিটি বিদ্যুৎ-এর বাড়ির পাশের একটি মেয়ের চোখে গিয়ে লাগে। এতে মেয়েটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগীরা মামলা করলে বাদী ও সাক্ষীদেরও হত্যার উদ্দেশে হামলা করেন।
এ ছাড়াও গত ৭ নভেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়। এসব ঘটনা পর্যলোচনা করে র্যাব ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুটার রিয়াজসহ তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রিয়াজ বাহিনীতে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। তাঁরা শুটার রিয়াজের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য প্রায় সময় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেন। এ ছাড়াও রিয়াজের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ও অস্ত্রের কারবার পরিচালনা করতেন। কেউ যদি রিয়াজ বাহিনীকে চাঁদা দিতে না চাইতো তাহলে ভুক্তভোগীদের ওপর হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখানো হতো।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রিয়াজের নেতৃত্বে তাঁর সন্ত্রাসী দল এসব এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে তার দল চাঁদা নিতো।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘শুটার রিয়াজ সোনারগাঁয়ের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া সময় ২০১৬ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ জগতের লোকজনের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। পরে রিয়াজ নিজেই একটি সশস্ত্রী বাহিনী গড়ে তোলেন।’
এন-কে
Leave a Reply