ডেনিশ রাজকুমারীর কাছে দেশে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের

ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোলান্ডসনের কাছে জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে প্রায় ৬ ঘণ্টা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করেন ম্যারি এলিজাবেথ ডোলান্ডসন। এ সময় তিনি আশ্রয়শিবির পরিদর্শনকালে পায়ে হেঁটে ক্যাম্প ঘুরে দেখার পাশাপাশি আলাপ করেন রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে। একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় ক্যাম্পে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

সকাল ৯টায় উখিয়ার কুতুপালংস্থ ক্যাম্প-৫-এ যান ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ। সেখানে পৌঁছালে রাজকন্যাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াতসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা।

ডেনিশ রাজকুমারী এক ঘণ্টা কাটিয়ে দেন এই ক্যাম্পে। ঘুরে ঘুরে দেখেন ক্যাম্পের চারপাশের পরিবেশ ও নানা কার্যক্রম। এরপর যান ক্যাম্প ৮-এর ওয়াচ টাওয়ারে। সেখানে পর্যবেক্ষণ করেন ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলের উদ্যোগে ক্যাম্পের পাহাড় ভাঙন রোধ এবং পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।

তারপর ক্যাম্প-৬ এ গেলে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত রোহিঙ্গা শিশু ও নারী-পুরুষ হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান রাজকুমারী ম্যারিকে।

এরপর পায়ে হেঁটে ঘণ্টাখানেক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। এ সময় ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারির কাছে রোহিঙ্গারা আকুতি জানান, নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ রুস্তম বলেন, ‘ডেনমার্কের রাজকুমারী ক্যাম্পে এসেছে আমাদের দেখার জন্য। তিনি হাত দেখিয়ে আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আর আমরা হাততালি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছি। খুবই জরুরি আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল তারমধ্যে হলো- রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা। এর চেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স দিয়ে রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজদেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করবে বলে আশা করছি।’

ক্যাম্প ই-৩, ব্লক-৪-এর মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘আমরা দ্রুত নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই। কারণ অন্যদেশে আর কতো দিন থাকব। তাই ডেনমার্কের রাজকুমারীর কাছে বেশি অনুরোধ করছি, আমাদের নিজদেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পর ক্যাম্পে রাজকুমারী গাছের চারা রোপণ করেন। রোহিঙ্গা কোর্ডিনেশন অফিসে উপকারভোগী রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলেন। এরপর তিনি উখিয়ার রাজাপালং এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের নানা সমস্যার বিষয়ে অবগত হন।

এদিকে ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি আগমনকে ঘিরে ক্যাম্পে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় ছিল বলে জানান উখিয়াস্থ ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. নাঈমুল হক।

তিনি বলেন, ‘ডেনমার্কের ক্রাউন প্রিসেন্স ম্যারি এলিজাবেথ ডোলান্ডসন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তিনি যেসব এলাকায় পরিদর্শন করেছেন সেখানে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। এখানে এসএসএফ ছিল, তাদের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন করে প্রতিটি জায়গাতে ৫০০- এর মতো এপিবিএন, জেলা পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।’

এর আগে সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ৩ দিনের সফরে কক্সবাজার পৌঁছায় ডেনমার্কের রাজকুমারী। বুধবার (২৭ এপ্রিল) কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

এন-কে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *