লালমনিরহাটের প্রতারক জাকির হোসেনের ৭০০ বিয়ের করার ইচ্ছা ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়ায় সেই বাসনা নাকি থমকে গেছে।
পুলিশের দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছেন জাকির হোসেন। মঙ্গলবার তেজগাঁও থানায় এক তরুণীর ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হন জাকির।
এর আগে নানা ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ২৮৬ নারীকে বিয়ে করার কথা এক নারীকে জানায় ৩৮ বছর বয়সী প্রতারক জাকির। এছাড়া এতগুলো বিয়েতে সহযোগিতা করার অভিযোগে জাকিরের প্রথম স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
তেজগাঁও থানার পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন জাকির। এদের সবাই সমাজের উচ্চবিত্ত, আত্মনির্ভরশীল, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী নারী।
এদের মধ্যে অনেককে তিনি বিভিন্ন সময় বিয়ে করেন। বিয়ের পর জাকির নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
জানা গেছে, সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখাতেন। জাকির ১৪ বছর আগে অর্থাৎ ২১ বছর বয়সে (২০০৫ সাল) প্রথম বিয়ে করেন। এরপর প্রতিবছর তিনি একটি করে বিয়ে করেন।
এরপর ভুয়া নাম দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে তাদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতেন। এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নিজেকে বেসরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা, আবার কখনো বড় ব্যবসায়ীর মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন।
জাকির কখনো নিজের এসব মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ফেসবুকে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিতেন। এসব দেখে অনেক নারী নিজে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আবার কোনো টার্গেট নারী তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট না করলে তার মেসেঞ্জারে মেসেজ দিতেন।
তাদের জানাতেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা তার প্লট ও ফ্ল্যাট আছে। এরপর যখন বুঝতে পারতেন নারীরা তার প্রতি পুরো দুর্বল হয়ে গেছেন তখন কৌশলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে বসতেন।
একপর্যায়ে ভুয়া কাজী দিয়ে মিথ্যা কাবিননামায় বিয়ে করতেন। আর বিয়ের পরই তার আসল চেহারা বেরিয়ে আসতো। নানা কৌশলে নববধূ ও তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন।
পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকির হোসেনের রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। ওই চক্রে নকল কাজি ও মৌলভি রয়েছে। এছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করাতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণও করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই তৌফিক আহমেদ বলেন, গত বছর জাকির এক তরুণীকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুললেও তাকে বিয়ে করেননি। এ ঘটনায় ওই তরুণী তেজগাঁও থানায় ধর্ষণের মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তখনই তার বহু বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের জুনে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আরো তিন নারীকে বিয়ে করেন জাকির। সর্বশেষ ফার্মগেটের এক নারীকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েও বিয়ে করেননি।
গ্রেফতারের পরপরই তেজগাঁও থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার জানিয়েছিলেন, এই ব্যক্তি মূলত একজন মারাত্মক প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমেই সে এতগুলো বিয়ে করেছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। তবে বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
এদিকে মামলার নথিতে জাকিরের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দেখানো হয়েছে থানা আদিতমারি, জেলা লালমনিরহাট। আর বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছে এ/পি সেবা ৩৭, আহসান মোল্লা রোড, হোসেন মার্কেট, গাজীপুর সিটি।
Leave a Reply