নতুন ‘পে-স্কেলের’ ঘোষণা থাকছে না বাজেটে

আসন্ন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য থাকছে না কোনো সুখবর। তাদের জন্য নতুন পে-স্কেলের (নবম বেতন কাঠামো) ঘোষণা থাকছে না। এ বিষয়ে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, আগামী বাজেটে পে-কমিশন গঠন এবং কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, নবম বেতন কাঠামোর ঘোষণা দেখতে চান সরকারি চাকরিজীবীরা। পে স্কেল বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার দাবি জানান তারা। এ দাবি আদায়ে তারা বর্তমানে আন্দোলনে আছেন।

বর্তমানে ২২ লাখ সরকারি চাকরিজীবী রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন পান। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও আছেন।

এদের পেছনে বেতন-ভাতা বাবদ বছরে খরচ হয় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে পেনশনে খরচ হয় আরও ২০ হাজার কোটি টাকা।

নতুন অর্থবছর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭০ হাজার ৭০১ কোটি টাকা এবং পেনশন বাবদ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখাই হবে সরকারের প্রধান কাজ।

এ জন্য আসন্ন বাজেটে প্রণোদনা, ভর্তুকি ও সামাজিক সুরক্ষায় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে-স্কেল দাবি যৌক্তিক হলেও এ খাতে ব্যয় করার মতো বাড়তি অর্থ বরাদ্দ রাখার সামর্থ্য আপাতত সরকারের নেই। ফলে এবারের বাজেটে পে-স্কেল ঘোষণা থাকছে না।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত পে-কমিশন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২০টি গ্রেডে বিভক্ত করে বেতন দ্বিগুণ করার পরামর্শ দেন। সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করে বর্তমান সরকার।

সরকারি চাকরিজীবীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা হওয়ার কথা। সাত বছর পার হলেও আর বেতন বাড়ানো হয়নি। এখন বেতন বাড়ানোর জন্য নতুন করে আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মচারিরা।

অষ্টম বেতন-কাঠামো অনুযায়ী, স্কেলের সংখ্যা মোট ২০টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বেতন স্কেল (গ্রেড-১) ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি কর্মচারী ঐক্যফোরামের সমন্বয়ক ও সচিবালয় কর্মচারি সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভুইয়া মিলন বলেন, ‘২০১৫ সালে সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল প্রদানের পর গত সাত বছরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, চিকিৎসা ব্যয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সীমিত আয়ের সরকারি কর্মচারিদের জীবন যাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য নতুন জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। আমরা ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে থেকেই তার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে নতুন পে-স্কেল ঘোষণাসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থমন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এতে কোনো কাজ না হওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরা এখন আন্দোলনমুখী। এ লক্ষ্যে ৩ জুন সরকারি কর্মচারি দাবি আদায়ে ঐক্যফোরামের ব্যানারে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ৯ জুন ঘোষিত বাজেটে বেতন কমিশন গঠন ও নবম বেতন স্কেল বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘোষণা না থাকলে ১১ জুন থেকে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল প্রদানের পর গত ৫ বছরে বিদ্যুৎ, পানি, ওষুধ, চিকিৎসা ও গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীতে সরকারি চাকরিজীবীদের ৫ বছরে ৫ শতাংশ হারে মোট ২৫ শতাংশ বেতন বেড়েছে।

অর্থাৎ জীবনযাত্রার ব্যয়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। অতি সম্প্রতি জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়েছে। তাই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের আগে এই ঘাটতি পূরণে ৬০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারি সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একজন কর্মচারীর ছয় জনের পরিবারে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য ন্যুনতম ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা জরুরি। একই সঙ্গে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান না করা পর্যন্ত সরকারি কর্মচারিদের অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ৬০ শতাংশ বেতন বাড়াতে হবে।’

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *